রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৩

বাংলা অভিধান থেকে পরিবর্তন হতে পারে মহামান্য ও মাননীয় শব্দের অর্থ

বাংলা ভাষায় মহামান্য ও মাননীয় শব্দ দুটির সাথে গভীর শ্রদ্ধা সম্মান অন্তর্নিহিত।রাষ্ট্র বা সমাজের বিশেষ মানুষ বা ব্যক্তি বিশেষদের ক্ষেত্রেই শুধু এই শব্দ দুটি ব্যবহার করা হয়। যারা মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য নিজেকে আত্নত্যাগ করে থাকে, গণমানুষের মুক্তির জন্য প্রাণপন লড়াই করে নেতৃত্বের  বিশেষ আসনে অধিষ্ঠিত হয় ,কেবল তাদের নামের পূর্বেই মহামান্য বা মাননীয়  শব্দদ্বয়  জুড়ে দিয়ে তার প্রাপ্য সম্মান  প্রদর্শন করা হয়। আমরাও ভুল করিনি এই শব্দ দুটির যথার্থ  ব্যবহারের ক্ষেত্রে। যাদের আত্নত্যাগে আজকের এই বাংলাদেশ সেই এ কে ফজলুল হক , মাওলানা  আবদুল  হামিদ খাঁন ভাসানী , হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী , বঙ্গন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, এই নামগুলোর সাথে আপনা আপনিই মহামান্য ও মাননীয় শব্দগুলো বসে যায় গভীর শ্রদ্ধাভরে।স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের ৪২ বছরের রাজনীতিতে এসেছে আমূল পরিবর্তন। এখন রাজনীতি বলতে মুক্তির সংগ্রাম বোঝায় না। এখন রাজনীতি হলো, সমাজের দুর্নীতিবাজ, চোর,দুস্কৃতিকারী,কালোবাজারীদের মহামান্য ও মাননীয় বানানোর ফ্যাক্টরী, রাজনীতি হলো প্রাইভেট লিঃ বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং জল্লাদ তৈরির কারখানা। রাজনীতিকে বানিজ্যে মেরুকরণ করার ফলে, এখন বাংলাদেশে রাজনীতির বাজারে পূর্ণ প্রতিযোগিতা মূলক বাজার ব্যবস্থা চালু হয়েছে।  বাজার ধরে রাখার জন্য দেশের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো অবলম্বন করছে নানাবিধ মার্কেটিং পলেছি। রাজনীতি শিল্পের ক্রমবর্ধমান বিকাশের ফলে এই শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে নানাবিধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যেমন রকমারি বোমা তৈরি ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম সরবারহ প্রতিষ্ঠান , আইন শৃংখলা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার উপযুক্ত ও প্রশিক্ষিত ফাইটার সরবারহ প্রতিষ্ঠান,দেশের অবকাঠামো দক্ষতার সহিত ধ্বংসের জন্য কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , রাজনৈতিক পন্যের গুনগতমান (যেমন , খাদ্য, বস্ত্র,বাসস্থান,চিকিৎসা,শিক্ষা সুনিশ্চিত করণ, অবকাঠামো উন্নয়ন, ঘরে ঘরে চাকুরীর সুযোগ ইত্যাদি) জনগনের নিকট তুলে ধরার জন্য ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়া প্রতিষ্ঠান, হয়তো এরই মধ্যে প্রস্তুতি চলছে টক শো তারকা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলার, কারণ সামনের রাজনীতির বাজারে ব্যাপক টক শো তারকার চাহিদা সৃষ্টির সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানের রাজনীতি ব্যবসায় উল্লেখিত বিষয়গুলো সংযোজনের ফলে ব্যবসায় অধিক মূলধন বিনিযোগের আধিক্য দেখা দিয়েছে। যার ফলে মূলধন সরবারহের জন্য দেশের  প্রধান রাজনীতি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বিত্তহীন মেধাবী ও দেশপ্রেমিক নেতাকর্মী সংগ্রহের পরিবর্তে বিত্তবান দুর্নীতিবাজ, চোর,দুস্কৃতিকারী,কালোবাজারী সংগ্রহের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশের বর্তমানে গার্মেন্টস ব্যবসা,শেয়ার ব্যবসা,ব্যাংকিং ব্যবসা মন্দা থাকায় অনেক বিনিযোগকারী এখন রাজনীতি ব্যবসার দিকে ঝুকে পড়েছেন। কিছু দিন পর পরই অনুমোদন পাচ্ছে নতুন নতুন রাজনীতি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আর অনুমোদনের সাথে সাথেই রমরমা বাজারে পড়ে থাকছেনা কেউই। প্রধান রাজনীতি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বড় অঙ্কের টাকা,সংসদের আসন বন্টন,মন্ত্রিত্ব ভাগাভাগী চুক্তিতে কিনে নিচ্ছে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও সদ্য গজানো  রাজনীতি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার।এছাড়া মহামান্য ও মাননীয় হওয়ার এত সহজ ডিসকাউন্ট দেশের প্রধান প্রধান রাজনীতি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোপূর্বে কখনো দেয়নি।এই সুযোগ যথাযত ভাবে কাজে লাগাতে  অনেক দুর্নীতিবাজ, চোর,দুস্কৃতিকারী,কালোবাজারী পূর্বের উপাধী মুছে  মাননীয় সাংসদ ,মহামান্য মন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি হওয়ার দিকে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। রাষ্ট্র পরিচালনার লিজ বা কন্ট্রাক্ট পেয়ে গেলেই  লগ্নিকৃত অর্থ ফেরতসহ,সম্পদ চারশত থেকে পাঁচশত গুন করার নিশ্চিত সুযোগ অনেক বিনিয়োগকারীর মধ্যেই আশার সঞ্চার করেছে। ইতোমধ্যেই গত সংসদ নির্বাচনে অর্থলগ্নী করে শতভাগ সফলতা পেয়েছেন বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের অনেক মাননীয় ও মহামান্য ব্যক্তিবর্গ। এই অভাবনীয় সাফল্যের ফলে বাংলাদেশে এই রাজনীতি শিল্পের সুদৃঢ় ভাবে বিকাশের অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।


ইতিহাসে অনেক শব্দের অর্থ অনেক অর্থবহ ও মহিমান্বিত হলেও পরবর্তিতে কর্মপ্রক্রিয়ার ফলে ঘৃণিত হয়েছে। রাজাকার শব্দের অর্থ যত অর্থবহই হোক না কেন , বাঙলার মানুষ সব সমই এই শব্দ দ্বারা ঘৃনা প্রকাশ করবে। তেমনি বাংলাদেশের রাজনীতি বানিজ্যিকরণ করার ফলে চলমান প্রক্রিয়ায় যেভাবে মহামান্য ও মাননীয় বানানোর মহাৎসব শুরু হয়েছে তাতে এই শ্রদ্ধামিশ্রিত শব্দ দুটির অর্থ বাঙলার মানুষের কাছে ভিন্নতায় রুপ নিতে পারে , অদূর ভবিষ্যতে অভিধান থেকে পরিবর্তন হতে পারে শব্দ দুটির অর্থ। তাই বাংলা ভাষার এই অমূল্য শব্দ দুটির অর্থ অপরিবর্তিত রাখার ব্যাপারে এখনি আমাদের সজাগ ও সচেতন হওয়া উচিত নয় কি ?

শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৩

সংখ্যালঘু দুষ্কৃতিকারী ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র

সারা পৃথিবীর মুসলীম সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশগুলো যখন যুদ্ধ, দাঙ্গা,হাঙ্গামায় জর্জরিত এবং বিশ্ব মিডিয়া ও পশ্চিমা অবিভাবকদের কূটনৈতিক চিন্তায় শরীর ঘামে ভেজা। তখন বাংলাদেশ নামের একটি দেশ যেখানে শতকরা ৮৫ জন মুসলিমের বসবাসের দেশ হওয়ার সত্বেও এই ভূখন্ডে প্রবাহিত হতে থাকে শান্তির সুবাতাস, চলতে থাকে সামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার অঘোষিত প্রতিযোগিতা। মুষ্টিমেয় মৌলবাদী গোষ্টীর যে তৎপরতা তাও সরকারের নিয়ন্ত্রনে।১৯৪৭,৭১ এ দেশ বিভক্তি সময়কালে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সম্পর্কের যে বিভাজন ও অবনতি হয়েছিলো তা ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানুষে মানুষের সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে একটি বিশেষ অবস্থানে পৌছুতেও সক্ষম হয়েছে। তার পরেও কিছু নৃশংস ঘটনাগুলো ঘটেছে। এর মধ্যে একটি মুসলিম পরিবারের সঙ্গে অন্য মুসলিম পরিবারের যে সংঘাত হয়েছে তা স্বাভাবিক ভাবেই দেখা হয়েছে। আবার যখন, একটি মুসলিম পরিবারের সাথে অন্য ধর্মাম্বলি পরিবারের যে সংঘাত হয়েছে, তখন তা যথাযত বিচার প্রক্রিয়ায় না এনে কিছু স্বার্থানেষী রাজনৈতিক দল সংখ্যালঘু নির্যাতন নাম দিয়ে রাজনৈতিক ফয়দা লুটার চেষ্টা করেছে। এধরনের ঘটনা পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের তুলনায় নগন্য। দেশে সামাজিক যে স্থিতিশীলতা তৈরী হয়েছিলো তা সামাজিক সৌহার্দ্যপূর্ন্য সম্পর্কের মধ্যে দিয়েই। আমাদের দেশটা দুইটা শ্রেণীতে বিভক্ত । একটা শ্রেনী স্বার্থান্বেষী সুবিধাভোগী শ্রেনী, অন্যটি দেশ প্রেমিক সাধারণ জনতা। স্বার্থান্বেষী সুবিধাভোগী শ্রেনীর মানুষ মুষ্টিমেয় হলেও এরা অর্থ বিত্ত ও সামাজিক ভাবে প্রভাবশালী। দেশের নিয়ন্ত্রনও তাদের হাতেই। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সুযোগ সুবিধা এদের জন্যই বরাদ্দ। এরা অর্থ ও প্রভাবের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পাঁচ বছর পর পর দেশটাকে ইজারা নিয়ে থাকে। তাই, অর্থের বিনিময় ছাড়া এদের নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা বাংলাদেশের মানুষ চিন্তাও করেনা। তাই দেশ প্রেমিক সাধারণ জনতা ভাগ্যের এই দুষ্ট পরিহাস মেনে নিয়েই গড়ে তুলেছে নিজস্ব এক সামাজিক বলয়। এক একটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমাজ যেনো এক একটি আদর্শ রাষ্ট্রের মতো। সামাজিক সমস্যাগুলো সামাজিক ভাবেই নিষ্পন্ন করার এক দারুন সংস্কৃতিও তৈরী হয়েছিলো। আমাদের এই শ্রেনীর মানুষের মধ্যে রয়েছে পবিত্র ধর্মীয় অনুভূতি, জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি পরম শ্রদ্ধা, জীবন যুদ্ধে নিজেদের টিকিয়ে রাখার আপ্রান প্রচেষ্টা।এদের চাহিদার সীমারেখাও সীমিত। এর মধ্যে দিয়েই পরিচালিত হচ্ছিল বাংলাদেশ নামের আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিটি। আমাদের সমস্ত মৌলিক অধিকার লুন্ঠনের পর, বেঁচে থাকার সর্বশেষ পূঁজি সামাজিক সৌহার্দ্য ও ধর্মীয় পবিত্র অনুভূতিটুকুর মধ্যে আজ ওদের নোংড়া হাত ডুকিয়ে দিয়ে লুটপাটের অভিযানে সহায়তার জন্য জাতিকে বিভক্ত করে দিয়েছে। আজ কেন যেন মনে হচ্ছে সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশপ্রেমিক জনতা সংখ্যালঘু দুষ্কৃতিকারী স্বার্থান্বেষী সুবিধাভোগী শ্রেনীর কাছেই পরাজিত হতে যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় অর্থ লুটপাট,সীমাহীন দুর্নীতি,দিনের পর দিন বিত্তহীন ও বিত্তবান বৃদ্ধির যে প্রতিযোগিতা চলছিলো, তা সাধারণ মানুষ যখন বুঝতে শুরু করলো, কথা বলতে শুরু করলো,সংঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করল, ঠিক সেই সময় ওরা জাতিকে বিভক্তির অস্ত্রটি ব্যবহার করে দিয়েছে। ওরা হয়তো বুঝতে পেরেছিলো, সংখ্যা গরিষ্ঠ জনতার আমাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হওয়ার সময় এসেছে। আজ ওদের ষড়যন্ত্রের ধোকায় পড়ে আমরা আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধংসের লীলায় মেতে উঠেছি ,নির্দ্বিধায় এক বাংলাদেশী ভাই আর এক বাংলাদেশী ভাইয়ের হত্যার হলি খেলায় মেতে উঠেছি। আজ এক পক্ষ অন্য পক্ষের হত্যাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি । এই হত্যা লীলার যে বীজ ওরা সমাজের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে তা এখনি সামাজিক ভাবে বিনষ্টের উদ্যেগ না নিলে এবং সচেতন নাহলে আগামীতে হয়তো কোন পক্ষেরই অপমৃত্যুর হাত থেকে রেহাই মিলবেনা।চক্রান্তকারীরা বিদেশে অবস্থান করবে, ভোগ বিলাসেরও কোন কমতি থাকবেনা কিন্তু আমার আপনার এই দেশেই অবস্থান করতে হবে, এই সমাজ থেকেই রুটি রুজির ব্যবস্থা করতে হবে।সেই সমাজের স্থিতিশীলতায় চক্রান্তকারীদের ষড়যন্ত্র থেকে দেশকে রক্ষার এখনি প্রকৃত সময় । বাংলার যে মুক্ত বাতাস থেকে প্রতিদিন আমরা সঞ্চিবনী শক্তি লাভ করি ,সেই বাতাসে বারুদের গন্ধ ছড়ানোর যে পায়তারা চলছে তা এখনি রুখে না দিলে ……..দেশ হয়তো ইরাক,আফগান, সিরিয়া বা আর একটি মিসরে পরিনত হতে বেশী সময় লাগবেনা।…..

শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৩

ফ্রান্সের প্রকৃতিতে শীতের আগমনী সুর


গ্রীষ্মের তাপদাহ ও শরতের শুভ্রতাকে বিদায় দিয়ে ফ্রান্সের প্রকৃতিতে এসেছে শীত। বৃক্ষরাজির বেশিরভাগ বৃক্ষের পাতা ঝরে পড়েছে। পাতাহীন কান্ডবিশিষ্ট গাছের অসাধারণ শৈল্পিক রূপের পাশাপাশি অনেক বৃক্ষ যৌবনের সবুজ রঙ বদলে ধারণ করেছে হলুদ বর্ণের পত্রযুক্ত রূপ। সৌন্দর্যবর্ধক লতাবিশিষ্ট গুল্ম, ক্যাকটাস ও পুষ্প ফোটানো গাছগাছালি বসন্ত ও শরতের প্রকৃতিকে সুষমায়িত ও ফুল ফোটানোর মহান দায়িত্ব পালন করে ক্লান্ত দেহকে অবসর দিয়েছে। এখন অপেক্ষা শুধু তুষারের আবরণে শেষ সমাধির।
 শীতের জড়োসড়ো প্রকৃতিতে পাখপাখালির কলকাকলি প্রায় থেমে এসেছে। বাহারি রঙ ও ডিজাইনের টি শার্ট, জিন্স ও শর্ট পোশাকের পরিবর্তে সবার শরীরে উঞ্চতাবর্ধক শীতের পোশাক। মেঘযুক্ত আকাশ, ঝিরিঝিরি বৃষ্টিধারা এখন জীবনধারার প্রাত্যাহিক অংশ। সূর্য মাঝে মাঝে মেঘ ভেদ করে তার অস্তিত্বকে জানান দিয়ে লুকোচুরি খেলায় মগ্ন। এমন প্রকৃতিতে একচিলতে রোদ যেন সদ্য যৌবনা ষোড়শী কন্যার মুখ দর্শন। পর্যটকের দল প্যারিসের যে সব পথঘাট, রেস্তোরাঁ কোলাহলমুখর করে রেখেছিল তা নিঝুম নিস্তব্ধতায় রূপান্তর করে সবাই আপন নিড়ে ফিরে গেছে।

গোটা ইউরোপ জুড়ে এখন থেকেই প্রস্তুতি চলছে খ্রীষ্টধর্মীয় সবচেয়ে বড় উৎসব ক্রিসমাস ডে পালনের। ফ্রান্সও তার ব্যতিক্রম নয়। এখানে এই উৎসবকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় নোয়েল। শীতের সমস্ত রিক্ততা ও সিক্ততাকে আনন্দে রূপান্তরের ক্ষেত্রে নোয়েল তুলনাহীন। দিনটি একটি বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠীর উৎসব হলেও এখানে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবাই এই উৎসবের আনন্দে নিজেকে রাঙ্গাতে কার্পণ্যতা করে না। এখন থেকেই সুপার মার্কেট ও বিশেষায়িত দোকানগুলো নয়েল টুপি, চকলেট, কেক ও নানাবিধ উপহার সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছে। অনেক উৎপাদক প্রতিষ্ঠান তাদের নিজ পণ্য সামগ্রীর ওপর বিশেষ ছাড় দিয়েছে। ডিসেম্বরের শুরু থেকেই ফ্রান্সের সকল শহরগুলো জেগে উঠবে চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জায়। ফুলের দোকানগুলোতে লেগে যাবে ক্রিসমাসট্রি বিক্রির ধুম।
প্রত্যেক ফরাসি উপহার বিনিময় করবে প্রিয় মানুষ, বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনের মধ্যে। শীতের তীব্রতা অনেকটাই ম্লান হয়ে যাবে এই উৎসব আনন্দের কাছে। তুষারের সাদায় রূপ নেবে এক ভিন্ন প্রকৃতি।


শীতের এই তীব্রতায় থেমে থাকে না ফরাসি জীবন ও জীবিকা। ভোরের আলো ফোটার আগেই কর্মব্যস্ত মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে মেট্রো-ট্রাম-বাসস্টেশন এবং রাস্তাঘাট ও শপিংমল। চারদিকে থাকে স্বাভাবিক জীবনধারা। মানুষ প্রতীক্ষায় থাকে। শীতের জীর্ণ প্রকৃতিকে বিদায় দিয়ে জীবনধারায় লাগুক আবার বসন্ত বাতাস।


ফ্রান্সের প্রকৃতিতে শীতের আগমনি, প্রকাশ :দৈনিক প্রথম আলো ৩০.১১.২০১৩

শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৩

ফরাসি ভূখন্ডে বাংলাদেশি জনগোষ্ঠী

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই উচ্চশিক্ষা, রাজনৈতিক আশ্রয়, বিভিন্ন বৃত্তিসহ নানা ভাবে বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর মানুষের শিল্প সংস্কৃতির তীর্থভূমি ফ্রান্সে আগমন ঘটেশুরুতে এ সংখ্যা নেহায়েত হাতে গোনা হলেও বর্তমানে ফ্রান্সে বসবাসরত বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় চল্লিশ হাজারের কোঠায়ফরাসি ভূখন্ডে স্থানীয় প্রশাসন ও জনগোষ্ঠীর কাছে বাংলাদেশ ও বাঙালি নামটা এখন বিশেষ গুরত্ব বহন করেএ দেশে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বসবাসরত মানুষের মধ্যে বাঙালি জনগোষ্ঠী তাদের জীবনযাপন, পেশা, সরকারের আইনের প্রতি আনুগত্য, নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি, অন্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষের প্রতি সন্মান প্রদর্শন ইত্যাদি কারণে স্বতন্ত্র এক ভাবমূর্তি সৃষ্টি করেছে
এখানে বসবাসরত বাঙালি জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই রাজধানী প্যারিসে বসবাস করেএছাড়া তুলুজ, তুলোন, রেস্ট, মারছাইসহ ফ্রান্সের অন্যান্য শহরেও বেশ কিছু সংখ্যক বাংলাদেশির বসবাস রয়েছে
স্থায়ীভাবে বসবাসরত বাঙালিদের অধিকাংশই রাজনৈতিক আশ্রয়ের মাধ্যমে স্থায়ী হয়েছেনএখানে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফরাসি নাগরিক, বাংলাদেশি রিফিউজি, ইমিগ্রান্ট, রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদনপ্রার্থী পরিচয়সহ অনেকেই অবৈধ অভিবাসী হিসেবে অবস্থান করছেন
পেশাগত দিক থেকে জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই রেষ্টুরেন্ট ব্যবসা ও রেষ্টুরেন্ট সংশ্লিষ্ট পেশার সাথে জড়িতএ ছাড়া ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, ট্যাক্সিফোন ও আমদানি রপ্তানি ব্যবসা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও অনেকেই সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেনএখানকার প্রশাসনিক কর্মকান্ডের সব কিছু ফরাসি ভাষায় পরিচালিত হয়ে থাকেতাই অনেক বাঙালি ফরাসি ভাষা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে আয়ত্ব করে অনুবাদকের পেশার মাধ্যমে কমিউনিটির মানুষের সেবার পাশাপাশি নিজেদেরকে স্বনির্ভর করেছেনতারা এই পেশাকে তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় করে তুলেছেনপাশাপাশি আইন ব্যবসা, প্রশাসনিক কর্মী ও কর্মকর্তা এবং শিল্প সংস্কৃতির মতো সৃজনশীল পেশায়ও বাঙালিরা স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল


এখানকার প্রত্যেক বাঙালি জন্মভূমি থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে বসবাস করলেও সবার বুকের এক কোণে বসবাস করে ছোট্ট একখন্ড বাংলাদেশস্ব স্ব পেশার পাশাপাশি শত ব্যস্ততার মধ্যেও নিজস্ব শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনীতি চর্চা ইত্যাদিতেও রয়েছে তাদের সরব উপস্থিতিবাংলাদেশের মতো এখানেও বাঙালির চিরাচরিত অনুষ্ঠানশহীদ দিবস, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস, পহেলা বৈশাখ, ঈদ, পূজা এবং অন্যান্য উৎসবগুলোর আনন্দ প্রবাসীরা মিলেমিশে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়সাহিত্য সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো যথেষ্ট উৎসাহ ও উদ্দীপনায় উদযাপন করে থাকে ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বরের মতো জাতীয় দিবসগুলোএছাড়া রবীন্দ্র-নজরুল ও অন্যান্য কবি সাহিত্যিকদের জন্ম ও মৃত্যু দিবস পালন এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক কমিউনিটি সংগঠনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন যেন এক দেশীয় আমেজের সৃষ্টি করেএখানে যে সব সংগঠন উল্লেখিত উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ নিয়ে থাকে তাদের মধ্যে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ, ইয়ুথ ক্লাব, একুশে উদযাপন পরিষদ, স্বরলিপি শিল্পী গোষ্ঠী, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মাটির সুর, বাংলাদেশ ভিউ, কালচার প্লাস অন্যতমউল্লেখ্য বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল চলচ্চিত্র লাল টিপ ফ্রান্স প্রবাসী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কাজী এনায়েত উল্লাহর প্রযোজনা ও প্রবাসী স্বপন আহমদের পরিচলনায় প্যারিসেই নির্মিত হয়েছেএছাড়া অনেকেই টিভি নাটক নির্মাণের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেনবাংলাদেশের অনেক শিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের বসবাস এই ফ্রান্সেতাঁদের মধ্যে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ও একুশে পদকপ্রাপ্ত মুকাভিনেতা পার্থ প্রতীম মজুদার, একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ, সনামধন্য আলোকচিত্রী আনোয়ার হোসেন অন্যতম

সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি অনেকেরই সাহিত্যচর্চার অভ্যাস রয়েছেসাহিত্যপিপাসু প্রবাসীদের উদ্যেগে মাঝে মাঝেই প্যারিস থেকে প্রকাশিত হয় গল্প, কবিতা ও ছড়া সংকলনউল্লেখ্য বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি মাইকেল মধুসুধন দত্ত ও লাল সালুখ্যাত ঔপন্যাসিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লা ফ্রান্সের প্রবাস জীবনেই লিখেছেন অনবদ্য গল্প, কবিতা ও উপন্যাস


অবাধ তথ্য প্রযুক্তির যুগে সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকতায় এসেছে এক নতুন দিগন্তপ্রবাসীদের সুখ দুঃখ, আনন্দ বেদনা, সফলতা, অর্জন ইত্যাদি সম্বলিত সংবাদ এখন বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে একটি বিশেষ জায়গা করে নিয়েছেফ্রান্সপ্রবাসী বাঙালিদের নানাবিধ সংবাদ তুলে ধরার জন্য নতুন প্রজন্মের অনেক তরুণকেই দেখা যায় ফ্রিল্যান্স হিসেবে ক্যামেরা হাতে সংবাদ সংগ্রহের কাজেবিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সংবাদ পরিবেশনকারীদের উদ্যেগে প্যারিসে একটি প্রেসক্লাব গঠনের চেষ্টা চলছেঅনেকেই প্যারিস থেকে নিয়মিতভাবে বাংলা পাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকা বের করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন


দেশের যে কোনো রাজনৈতিক সংকট ও অন্যান্য পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মতো এখানেও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনগুলো যথেষ্ট ভূমিকা পালন করেদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর এখানে শাখা রয়েছেপ্রত্যেকেই যার যার দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে থাকেআবার অনেকেই স্বপ্ন দেখেন দেশের প্রচলিত রাজনীতির ধারা ভেঙ্গে নতুন আঙ্গিকে একটি বাংলাদেশ গড়ারএর পরিপেক্ষিতে এখানকার প্রগতিশীল রাজনৈতিক চিন্তাধারার প্রবাসীদের দেখা যায় দেশের রাষ্ট্রীয় স্বার্থবিরোধী কর্মকান্ড, দুর্নীতি, অনিয়ম, সন্ত্রাস ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়ে ব্যানার ফেস্টুন হাতে প্রতিবাদ জানাতে


প্রবাসী বাংলাদেশিরা রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সরাসরি জড়িত না থাকলেও যথেষ্ট রাজনৈতিক ও সমাজ সচেতনদেশের যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্ঘটনায় নির্বিকার বসে না থেকে বিভিন্নভাবে অর্থ সংগ্রহ করে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকেতাছাড়া এখানে অনেক সাদা মনের প্রবাসী রয়েছেনযারা প্রতিনিয়ত নিঃস্বার্থভাবে কমিউনিটির বিপদগ্রস্থ ও সমস্যাক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান এবং সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন


আড্ডা দিয়ে ও খোশ গল্প করে সময় কাটানোয় বাঙালিদের বিশেষ জুড়ি রয়েছে, এখানেও তার ব্যতিক্রম নয়প্যারিসের গারদো নর্থ, লাশাপেল, ক্যাথসীমা প্রভৃতি এলাকার রেষ্টুরেন্ট, ক্যাফে বার ও রাস্তার পাশগুলো প্রতিদিন জেগে ওঠে বাঙালিদের রাজনৈতিক, সাংগঠনিক আলোচনা ও হাসিঠাট্টায়যা ক্ষণিকের জন্য ভুলিয়ে দেয় প্রবাস জীবনের দূরত্বের কষ্ট


ফ্রান্সপ্রবাসী বাঙালিদের এখানে হাজারো সাফল্যগাথা, কর্মকান্ড ও প্রচেষ্টার পাশাপাশি রয়েছে বেশ কিছু প্রতিকূলতাপ্রথমত প্রত্যেক বাঙালিকে এখানে এসে যুদ্ধ করতে হয় পৃথিবীর অন্যতম দুর্বোধ্য ফরাসি ভাষার সঙ্গেঅদক্ষ ভাষাজ্ঞানের কারণে প্রশাসনিক ও কর্মক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত হোঁচট খেতে হয়অনেক ক্ষেত্রে কাজ হারিয়ে বেকারও হতে হয়তাই নতুন করে যাঁরা ফ্রান্সে বসবাসের কথা ভাবছেন, তাঁদের উচিৎ এখন থেকেই ফরাসি ভাষা জ্ঞান অর্জনের ওপর বিশেষ গুরত্ব দেওয়া
অনেক বাংলাদেশিকেই ফ্রান্সে আসার পর প্রথম প্রথম তীক্ত পরিস্থিতির সম্মুখীন ও মানবেতর জীবন যাপন করতে হয় শুধু আইনগতভাবে চলার সঠিক দিক নির্দেশনা ও বৈধভাবে বসবাসের স্বচ্ছ্ব ধারণার অভাবেঅনেক ক্ষেত্রে দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হওয়ার নজিরও রয়েছেএই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্যারিসস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের যৌথ প্রচেষ্টায় একটি বিশেষ সেবা বিভাগ খোলার বিষয়টি ভেবে দেখার সময় এসেছে


পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো ফ্রান্সেও বেড়ে উঠছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মযাদের জন্ম এই ফ্রান্সের মাটিতেই এবং এদের শিক্ষা সংস্কৃতি ফরাসি পরিমন্ডলের মধ্যেএদের মধ্যে অনেকেই শিক্ষাজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে ফ্রান্স সরকারের বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মে নিয়োগ হচ্ছেনযা বাঙালি কমিউনিটির প্রবাসীদের জন্য অত্যন্ত সুসংবাদতাছাড়া অনেক বাংলাদেশি নাগরিক এখানকার ফরাসি ও অন্য দেশের নাগরিককে বিয়ে করে সংসার করছে এবং তাদের ঘরে জন্ম নিয়ে বেড়ে উঠছে দ্বৈত নাগরিকত্বের প্রজন্মদুঃখের বিষয়, এখানে বেড়ে ওঠা এই প্রজন্মের অধিকাংশই শুদ্ধভাবে বাংলা বলতে, লিখতে, পড়তে এবং বলতে পারে নাএর কারণ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অন্যান্য দেশে বাংলা শিক্ষার বিভিন্ন স্কুল প্রতিষ্ঠিত হলেও এখনো ফ্র্রান্সের মাটিতে গড়ে ওঠেনি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক বাংলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানএ ভাবে চলতে থাকলে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে এই নব প্রজন্মের অস্তিত্ব থেকে মুছে যাবে তার বাঙালিত্ব এবং হারিয়ে ফেলবে তার শেকড়ের সন্ধানতাই বিলম্ব না করে এখনি বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় এবং কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের সম্মিলিত উদ্যেগে কিছু বাংলা শিক্ষা স্কুল প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজনযাতে এই স্কুল থেকে প্রবাসে বেড়ে ওঠা প্রজন্ম বাংলা শিক্ষার পাশাপাশি, বাংলা কবিতা, গান ও শিল্প সাহিত্যচর্চার সুযোগ পায় এবং বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে পারে


অদূর ভবিষ্যতে ফ্রান্সে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা রেমিটেন্সের মাধ্যমে দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে আরো বেশি বেশি অবদান রাখবেফরাসি ভূখন্ডে গড়ে তুলবে তথ্য প্রযুক্তি, মেধা ও জ্ঞান নির্ভর সমাজফরাসি জনগোষ্ঠীর নিকট জায়গা করে নেবে সুনাম ও আস্থার বিশেষ একটি স্থানএটাই প্রত্যাশা
মুহাম্মদ গোলাম মোর্শেদ
প্যারিস, ফ্রান্স
ফরাসি ভূখন্ডে বাংলাদেশি জনগোষ্ঠী, প্রকাশ : প্রথম আলো

ফরাসি দেশে বাঙ্গালিরা, প্রকাশ : ই প্রথম আলো

ফ্রান্সে বাংলাদেশিরা কেমন আছেন? প্রকাশ : বেঙ্গললি টাইমস, কানাডা

মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৩

বর্ষনমুখর দিনে জরদা দো এক্লিমেসিও পরিদর্শন



দুদিন ধরে মনে হচ্ছে প্যারিসের প্রকৃতিতে যেন বাংলাদেশের মতো আষাঢ়-শ্রাবণের ছোঁয়া লেগেছেকখনো ঘনবর্ষণ আরার কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ার দৃশ্য দেহ-মনে এক অন্য রকম আচ্ছাদন এনে দিচ্ছেযখন বৃষ্টির টুপটাপ শব্দে ঘুম ভাঙল, তখন মনে হচ্ছিল আমি বাংলার কোনো অজপাড়াগাঁয়ের শণবন ও বাঁশের তৈরি কোনো কুঁড়েঘরে শুয়ে আছি বর্ষণমুখর এক প্রভাতবেলায়বৃষ্টির কারণে ঠান্ডার প্রকোপটাও বেড়ে গিয়েছেতাই অলস দেহটা বারবার গৃহমুখী হতে চাচ্ছিলমনে হচ্ছিল, আজ গৃহবন্দী হয়ে স্মৃতিচারণা করব, প্যারিসের প্রকৃতি থেকে একচিলতে বাংলার বর্ষার স্বাদ নেবপ্যারিসে বৃষ্টি হলে এখানের রাস্তাঘাট অনেকটাই জনমানবশূন্য হয়ে যায়ক্যাফে বারগুলোর আড্ডা তেমন জমে ওঠে নাবৃষ্টির প্রকৃতিতে অধিকাংশ ফরাসির মন বিষণ্নতায় ছেয়ে ফেলেফরাসি সাহিত্যেও বৃষ্টির প্রকৃতিকে তেমন ফুটিয়ে তোলা হয়নিকারণ, এই বৃষ্টি ফরাসি জনগোষ্ঠীর কাছে অপন্দের বিষয়গুলোর মধ্যে একটিঅপর দিকে বাংলার প্রকৃতিতে বৃষ্টি এক অপরূপ নান্দনিকতার নামতাই তো রবীন্দ্র, নজরুল এবং অন্যান্য কবির কাব্য-গানে বর্ষা ও বৃষ্টির প্রকৃতিকে নানা রং ও ঢঙে ফুটিয়ে তোলা হয়েছেআর এই অপরূপ নৈসর্গিক প্রকৃতির মধ্য দিয়ে আমার শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের অমিয় সুধা পান করাতাই তো এই সুদূর প্রবাসে বসেও বৃষ্টি দেখলে আমি ফিরে যাই সেই ছেলেবেলার বর্ষার নদীর পাড় ধরে দৌড়ে একঝাঁক বালকের ন্যাংটা হয়ে ঝাঁপ দিয়ে ডুবসাঁতার খেলার দলে, বৃষ্টিভেজা ফুটবল খেলার মাঠে, হারিয়ে যাই পড়ার টেবিলের সামনে জানালা খুলে ফুল বাগানের ফোটা ফুলগুলোর বাতাস বৃষ্টি সংমিশ্রিত দোল খাওয়ার রোমাঞ্চিত দৃশ্যেএ যেন না পাওয়ার মাঝে হাতড়ে কিছু খুঁজে পাওয়ার সান্ত্বনা২৫ আগস্ট রোববারছুটির দিনবিছানায় শুয়ে স্মৃতি রোমন্থন করছিলামকিন্তু সে স্বাদ আজ আর বেশি নেওয়া হলো নাপ্যারিসের কিছু সাংস্কৃতিক সংগঠনের বন্ধু মিলে সেদিন আয়োজন করেছিল এক ব্যতিক্রমী ভ্রমণ কর্মসূচিপরিদর্শন স্থান ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন কর্তৃক নির্মিত জরদা দো এক্লিমেসিও উদ্যানতাই পরিদর্শক দলের একজন হিসেবে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে এবং সব স্মৃতিরোমন্থিত সুখানুভূতির পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লাম জরদা দো এক্লিমেসিও পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে১৮৬০ সালের ৬ অক্টোবর ভ্রমণার্থীদের জন্য এই উদ্যানটি খুলে দেওয়া হয় এবং এটিই প্যারিসের সবচেয়ে পুরোনো উদ্যানপ্রায় দুই মিলিয়ন ভ্রমণার্থী পরিদর্শিত উদ্যানটিতে প্রবেশের পর চোখে পড়ল ময়ূরের অবাধ বিচরণহরিণের দ্বিধাহীন মুক্ত চলাচলপাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে সংগৃহীত বিশেষায়িত গৃহপালিত পশুর খামার; উট, গরু, ছাগল, গাধা ইত্যাদি আমাদের পরিদর্শক দলের সবাইকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করেসেই সঙ্গে বয়ে চলা  লেকের স্বচ্ছ জলে বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ যেন এক বাড়তি মুগ্ধতা এনে দেয়সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির বর্ষণ নিঃশেষ হয়ে গেল এবং আমরা অবস্থান নিলাম উদ্যানের ভেতরে অবস্থিত একটি ক্যাফে বারেসবাই এই ভ্রমণের উচ্ছ্বাস ব্যক্ত করল নিজস্ব অনুভূতি থেকেসিদ্ধান্ত হলো, এই সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠক বন্ধুরা কর্মক্লান্ত দেহ-মনকে উজ্জীবিত করার জন্য প্রতি মাসে একদিন এভাবেই বেছে নেবে ঐতিহাসিক কিংবা বিশেষ কোনো স্থান এবং ভ্রমণের বর্ণনা ও ছবি প্রকাশ করা হবে বিশেষ একটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে
উল্লেখ্যএই আয়োজনের প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন ফ্রান্স উদীচীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান এবং সঞ্চালকের বিশেষ দায়িত্বে ছিলেন ফরাসি বংশোদ্ভূত একজন বাঙালি বধূ

প্যারিসে বাংলার বর্ষার স্বাদ, প্রকাশ: দৈনিক প্রথম আলো ০৭.০৯.২০১৩
প্যারিসে বাংলার বর্ষার স্বাদ, প্রকাশ: দৈনিক ইপ্রথম আলো ০৭.০৯.২০১৩

শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৩

নিস্তব্ধ রাতের ফরাসি জনপথ......

DSC_2481 by Muhammad Golam Morshed
DSC_2481, a photo by Muhammad Golam Morshed on Flickr.
বনের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা নিস্তব্ধ রাতের ফরাসী জনপথ.................ছবিটি Château de Vincennes থেকে তোলা।
morshed's photography

শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৩

হে মহাবীর, তুমি ক্ষমা করে দিয়ো....

আজ শোকাবহ ১৫ই আগষ্ট। আমরা এমনই এক হতভাগা ও বিশ্বাস ঘাতক জাতি, পৃথিবীতে বিরল। যে মানুষটা আমাদেরকে স্বাধীনতা এনে দিলো,উপহার দিলো এক খন্ড সার্বভৌম মানচিত্র, জাতীর সেই সূর্য্যসন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান , আমরা তাকে স্বপরিবারে হত্যা করেছি। লজ্জায় আজ মাথানত হয়ে যায় । হে মহাবীর , তোমার রেখে যাওয়া এই অকৃজ্ঞ জাতীকে তুমি ক্ষমা করে দিয়ো। ব্রিজ , কালভার্ট কিংবা কোন ভবনের নামফলকে নয় , বাঙ্গালী জাতির অস্তিত্ব যতদিন রবে এই পৃথিবীর বুকে , ঠিক ততদিন তুমিও রবে বাঙ্গালীর চিন্তা চেতনা ও মননে গভীর শ্রদ্ধাভরে। আজকের এই দিনে, হে মহাবীর তোমাকে স্বশ্রদ্ধ সালাম ….............

মঙ্গলবার, ৪ জুন, ২০১৩

ভুল শুধরে আবার ফিরে আসবে আশরাফুল।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মোঃ আশরাফুল ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ নিজের আত্ন উপলব্ধি থেকে অবলীলায় স্বীকার করে বীরত্বের এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো। মানুষ কোন কোন বিশেষ পরিস্থিতিতে রিপুর তারনায় অপরাধ করে ফেলে। এই অপরাধের ফলে যদি কারো মধ্যে আত্নসূচনা হয় এবং ভূল শুধরে সঠিক পথে চলে আসে, তবেই সে মহত্বের পরিচয় দিলো। আশরাফুল তার বয়স অনুপাতে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য অনেক কিছু দিয়েছেন। হয়তো তার অপরিপক্ক বুদ্ধির কারনে একটা ভূল করে ফেলেছে এবং সে অনুতপ্ত । এই একটি ভুলের জন্য তার সমস্ত অবদান ও ত্যাগ ম্লান হয়ে য়েতে পারেনা। আমাদের প্রত্যাশা আশরাফুল তার সমস্ত ভুল শুধরে নবরুপে আবার তার ভক্ত ও ক্রিকেট প্রেমিদের মাঝে প্রত্যাবর্তন করবেন এবং তার পরিস্থিতি থেকে দলের অন্যান্য সদস্যরা শিক্ষা গ্রহন করে এ জাতিয় ক্রিকেট অপরাধ থেকে নিজেদেরকে সতর্ক দুরত্বে রাখবেন। আমাদের উচিৎ তার এই দুঃদিনে তাকে ভৎসনা না করে তার পাশে থেকে শুধরে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া। সেই সাথে কামনা করি, আশরাফুলের মত আমাদের সমস্ত চরিত্রহীন রাজনীতিবিদের তাদের সমস্ত অপর্মের জন্য আত্ন উপলব্ধি হউক এবং সংশোধিত হয়ে দেশ গড়ার কাজে মনোনিবেশ করুক।http://www.amarblog.com/MorshedMehjabin/posts/168923

জন্মগত ভাবে ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয় যথার্থ নয়, ধর্মীয় দর্শন চর্চা ও পালনের মধ্যেই ধার্মিকের পরিচয়।

প্রতিটি মানুষ যে গোত্র বা সম্প্রদায়ে জন্মগ্রহন করে থাকে স্বাভাবিক দৃষ্টিকোন থেকে প্রত্যেকে নিজ নিজ গোত্রের পরিচয় বহন করে থাকে। প্রতিটি সম্প্রদায়ের নিজস্ব দর্শন রয়েছে এবং অনেকেই তার গোত্রীয় দর্শন চর্চা এবং পালন করে থাকে। আমার জানা মতে প্রতিটি ধর্মীয় দর্শনে বিভিন্ন ভাবে মানুষের শান্তির বানী শোনানো হয়েছে এবং পাপ থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। তারপরেও যদি কেও পাপ কর্মে লিপ্ত হয় তবে ঐ পাপের দায়ভার ঐ ধর্মীও দর্শনের নাকি একান্তই ঐ ব্যক্তির। ধরুন আসিফ মহিউদ্দিন,প্রণব আচার্যা,সুসান্তদাস গুপ্ত তসলিমা নাসরিন এরা এক একজন ধর্ম বিদ্বেষী লেখক কিন্তু এরা এক একটি বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ে জন্মগ্রহন করেছেন এবং ঐ সব সম্প্রদায়ের নাম পরিচয় বহন করছে। এখন এই লোকগুলো দ্বারা যদি কোন অন্যায় কার্য সংগঠিত হয়, তাহলে তাদের কর্মের দায়ভার তার পৈতিক সম্প্রদায়ের উপর চাপানো মূর্খামী নয় কি?

সম্প্রতি একটি ১১ বছরের হিন্দু শিশুকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করে ধর্ষনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি গোষ্ঠি ধর্মীয় সহিংসতার অপচেষ্টা করছে। যে পশু এই ঘৃন্য কাজটি করেছে সে কি আসলেই ইসলামী জ্ঞানসম্পর্ণ মানুষ এবং তার এই কর্ম কি ইসলাম চর্চার ফসল? অবশ্যই নয় ! তাহলে কেন আমরা এই অপরাধের সঙ্গে  ইসলাম শব্দটি যোগ করছি। এর ফলে আমাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্পর্কে ফাটল ধরে জাতিগত হিংসার সৃষ্টি হচ্ছে। আসলে জন্মগত ভাবে কোন ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয় যথার্থ নয়, ধর্মীয় দর্শন চর্চা ও পালনের মধ্যেই ধার্মিকের পরিচয়। আমাদের উচিৎ, কোনো অপরাধ সংগঠিত হলে, কোন প্রকার বিভাজন না হয়ে  সম্মিলিত ভাবে অপরাধীর দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যাপারে শোচ্চার হওয়া।

মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০১৩

লাশের দেশ বাংলাদেশ !

বাংলাদেশের ক্ষমতা হায়েনারা এখন তাদের সেরা সময় পার করছে। রক্ত, লাশ এবং নৃশংসতা তাদের ব্যবসার মূল উপকরণ। যা বর্তমান সময়ে খুবই সহজলভ্য এবং খুব সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। রক্তমাখা গুলিবিদ্ধ লাশ, অগ্নিদগ্ধ কাবাব বানানো লাশ, কংক্রিটের দেয়ালে চাপা দেয়া গলিত পঁচা লাশ, বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন লাশ এত সহজেই ইতোপূর্বে একসাথে আমাদের রাজনৈতিক ঠিকাদাররা পায়নি। ঠিকাদারদের তৈরী নিজস্ব ইলেকট্রনিক্স, প্রিন্ট মিডিয়া, ব্লগ,সদ্য গজানো দালালী মঞ্চ ও জোট সমূহ এবং ইন্টার্নেটের সামাজিক যোগাযোগ ম্যাধ্যমগুলোতে নিয়োগপ্রাপ্ত এজেন্টরা ক্ষমতার দৌড়ে নিজস্ব ঠিকাদারী দলকে (আওয়ামী, বি এন পি) এগিয়ে রাখার জন্য বাংলাদেশকে একটি লাশের দেশে পরিনত করার জন্য প্রাণপন ধোঁকাবাজি খেলা চালিয়ে যাচ্ছে। ওরা বাংলার মানুষের সুখের ঘুম সহ্য করতে পারেনা বলেই এই মৃত্যু মৃত্যু খেলা শুরু করেছে..........তাই ধোঁকাবাজি থেকে সাবধান হওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়.........জীবন কি এতই সস্তা !

সোমবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

কট্টরপন্থী মনোভাব এবং দেশের চলমান প্রেক্ষাপট।


দেশের চলমান অবস্থা দেখে মাঝে মাঝে মনটা খুবই খারাপ হয়ে যায়সবাই যার যার স্বার্থের জন্য ধর্ম ও স্পর্শকাতর চেতনাকে ব্যাবহার করছে আর এই ফাঁকে দুর্নীতিপরায়ণদেরকে আড়াল হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছেকেউ ভাবছেনা বৃহৎ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দিনকাল কেমন কাটছে ,সামাজিক নিরাপত্তা আজ হুমকির দোরগোড়ায় পৌঁছেছে, বিদেশী বিনিয়োগে আশংকা সৃষ্টি হচ্ছে, কষ্টার্জিত রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো বিনষ্ট করা হচ্ছে, সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কে ফাটল ধরানোর চেষ্টা চলছেএর পেছন থেকে দেশদ্রোহীরা সবাইকে বোকা বানিয়ে হাস্যরস্য করছে

 আমরা কি একবার এভাবে ভাবতে পারিনা, এই দেশ আমাদের , ষোল কোটি মানুষ আমরা এক পরিবারের সদস্য, আমাদের সমস্যাগুলো আমরাই মেটাবো দেশের প্রচলিত আইন ,প্রশাসন ও সংসদের মাধ্যমেআমাদের প্রতিবাদ থাকবে, দাবী থাকবে, আন্দোলন সংগ্রাম সবই থাকবে কিন্তু প্রতিবাদের ভাষা  হবে শিষ্টাচারপূর্ণ , কুরুচিপূর্ণ নয়যদি শ্লোগানের ভাষা এই হয়, একটা করে …………….ধর, ধরে ধরে জবাই করএই ধরনের শ্লোগান সম্বলিত আন্দোলন আর যাই হোক কখনো মুক্তির আন্দোলন হতে পারেনা বরং রাষ্ট্র ধ্বংসের আন্দোলন হিসেবে আখ্যা দেওয়া যেতে পারেআন্দোলনের নামে একটা গোষ্ঠী ফেসবুক, টুইটার,ব্লগ ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেভাবে মিথ্যাচার চালাচ্ছে তা দেশের জন্য ভয়াবহ আশংকাজনক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছেকেউ মিথ্যা তথ্য লিখে লেখার উপরে জনপ্রিয় গনমাধ্যমের লঘু সেঁটে দিয়ে প্রচার করছে,কখনো ফটোসপ ভিডিও এডিটিং করে প্রপাকান্ডা ছড়ানো হচ্ছে ,মেয়েদের ছবি দিয়ে ভুয়া আইডি খুলে সদস্য বাড়িয়ে মিথ্যা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছেযারাই এগুলো করছে তাদেরকে আমি কখনো সংগ্রামী বলবোনা , প্রতারক বলবো কারন ভীরু কাপুষরাই সব সময় মিথ্যা ও প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে থাকে এবং নিজেদের প্রয়োজনেই ধর্মীয় দর্শন ,সমাজতন্ত্র ,গনতন্ত্র মনিষীদের বানী ব্যাবহার করে থাকে, আবার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে এগুলোর বিরোধীতা করে থাকেকেউ যদি মনে করে আমিই সঠিক ও সত্য অবস্থানে আছি তাহলে আপনার সত্য দিয়ে প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করেন,মিথ্যা ও ভণ্ডামির আশ্রয় কেন ? আপনার যদি মনে হয় কেউ বিপদগামী হচ্ছে তাহলে তাকে আপনার সত্য দর্শন দিয়ে বুঝিয়ে আপনার পথে আনুন,না বুঝলে কাপুরুষের মত অবুঝের গলায় ছুড়ি চালানোর চেষ্টা কেন ?

আজ ন্যায়,যুক্তি সঙ্গত ও নিজস্ব চিন্তা উপলুব্ধ মতামত প্রকাশ করলে, সেটা যদি কারো বিন্দু পরিমান বিপক্ষে চলে যায় তাহলে কেউ রাজাকার,সাগু অথবা নাস্তিক বা মুর্তাদ হয়ে যাচ্ছেযারা নিজেদেরকে প্রগতিশীল দাবী করেন তাদের আচরনে আজ প্রতিক্রিয়াশীলদের স্বভাব ফুটে উঠছে আর প্রতিক্রিয়াশীলরা আরো কট্টর রূপ ধারন করছেএই সব কট্টরপনা ও উস্কানিমুলক বাক্য দেশের মধ্যে হানাহানি খুনাখুনি বৃদ্ধি ছাড়া আর কোন ভালো ফলাফল বয়ে আনবেনাযে যে পক্ষেই থাকুননা কেন আপনাদের কট্টরতার হানাহানি থেকে যদি কারো প্রাণ নাশ হয় তাহলে হয়তো লাশের কফিন ছুঁয়ে আন্দোলনকে আরো বেগবান করার শপত নেবেন,দুই দিন জোরালো শ্লোগান দেবেন,শহীদের খেতাব দেবেন। কিন্তু পারবেন, সন্তানহারা পরিবার যে ক্ষতির সম্মুখীন হলো সেই ক্ষতি পূরণ করতে ?,আপনার রাষ্ট্র কি দায়িত্ব নেবে ঐ শহীদ পরিবারের

দেশের মানুষের যখন গণমানুষের অধিকার,দুর্নীতি,বেকাত্ব, অর্থনৈতিক মুক্তি,সুশাসন ,সামাজিক নিরাপত্তা,সুষ্ঠ ও সঠিক বিচার ব্যবস্থা এবং ৭১ এর যুদ্ধাপরাধের নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ বিচার কার্যকর ইত্যাদি বিষয়ে ফুসে ওঠার কথা তখন দেশদ্রোহী একটা মহল  নিজেদের অপকর্ম ও পাপকে ঢাকার জন্য অত্যন্ত নিখুত ও সুকৌশলে নাস্তিক ও আস্তিক নামক বায়বীয়  দুই শব্দ ডুকিয়ে দিয়ে  জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেআপনারা যারা কট্টরতা অবলম্বন করে দেশকে নিয়ে ধ্বংস লীলায় মেতে উঠেছেন,আপনাদের অনেকেই হয়তো চক্রান্তকারীদের সাথে হাত মিলিয়ে টুপাইচ কামাই করে সংসার চালাচ্ছেন আবার অনেকেরই নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অর্থবিত্ত রযেছে তাদের হয়তো কোন সমস্যা হবেনা, কিন্তু যে গার্মেন্টস শ্রমিকে মুনাফাখোর মালিকের বীমা কোম্পানির টাকা আদায়ের জন্য আগুনে পুরে আত্নহুতি দিতে হয় , সেই সব শ্রমিকের মালিকেরা আপনাদের কট্টর আন্দোলন সংগ্রামের দোহার দিয়ে বলবে শিপ্টম্যান্ট বাতিল হয়েছে,বায়ার অর্ডার বাতিল করেছে ইত্যাদি অজুহাতে শ্রমিকের বেতন বন্ধ করে দেবে, শ্রমিক বাধ্য হয়ে সংসার চালাতে ডঃ ইউনুসের গ্রামীন ব্যাংকের জামানত বিহীন ক্ষুদ্র ঋণ অথবা রক্তচোষা আশা সমিতির ঋণের জালে জরিয়ে হাবুডুবু খাবে, তখন কি আপনাদের খুঁজে পাওয়া যাবে এই অসহায় জনগোষ্ঠীর পাশে ? আমাদের চেতনা ভোতা হয়ে যায়, যখন দেখি তাজরিন গার্মেন্টসের শত শত শ্রমিককে পুরিয়ে হত্যা করা হয় যা ৭১ এর গণহত্যা তুল্যচেতনা আবার জাগ্রত হয় যখন দেখি  দলীয় স্বার্থ বা নেতানেত্রীর স্বার্থে ঘা লাগেদিন এনে দিন খাওয়া মানুষের চেতনাবোধ ও ধর্ম প্রতিদিনের প্রয়োজন মেটানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং এদের কোন দল থাকেনা, এদেরকে প্রতিদিন যুদ্ধ করতে হয় দরিদ্রতা নামক এক ভয়ংকর দানবের সাথেআপনাদের কট্টর আন্দোলন যদি এই শ্রেনীর মানুষের পেটে টান মারে তাহলে যত নীতি বাক্যই ছুড়ুননা কেন সবই ভণ্ডামিতে পরিণত হবে।  

বাংলাদেশ আজ পূঁজিপতি ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের স্বার্থ রক্ষাকারী রাষ্ট্রযন্ত্রে পরিণত হয়েছেমধ্যবিত্ত ও সাধারণ মানুষের জন্য রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা আজ কল্পনাতীত ব্যাপারদেশটাকে স্বজনপ্রীতি করে গুটিকয়েক গোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় অধিকার ভাগ করে নিয়েছেপ্রতিটি মানুষ নিজস্ব উদ্যোগে নিজের পরিবারকে রক্ষা করার আপ্রান চেষ্টা করছেদেশের জাতীয় আয়ের বিশাল একটা অংশ জুড়ে থাকে বিদেশে কর্মরত বাঙলীদের দেশে পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা এই অর্থ যেমন এক একটি পরিবারকে আর্থিক নিরাপত্তা দিচ্ছে অন্যদিকে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখছেযারা নেপথ্যের চক্রান্তকারীদের  উস্কানীতে মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে মনের ক্ষুধা মেটাচ্ছেন তারা যদি একবার দেখতেন প্রবাসিরা পরিবার পরিজনের মায়ামহ ত্যাগ করে কত কষ্ট করে অর্থ উপার্জন করে দেশের জন্য অবদান রেখে চলছে ,তাহলে হয়তো একটুর জন্য হলেও আপনাদের উগ্র চেতনাবোধে বসন্তের হাওয়া লাগতো

দেশের চলমান বিশৃঙ্খলার কারণে আজ সরকার নিয়ন্ত্রিত পুলিশ বাহিনীর হাতে বিনা দোষে সন্দেহাতীত ভাবে অনের সাধারণ মানুষকে গ্রেপতারের স্বীকার হয়ে পুলিশী নির্যাতন ভোগ করতে হচ্ছেএর ফলে অনেক ভুক্তভোগী পরিবারের দৈনন্দিন আয় বন্ধ হয়েগিয়েছে ,কিভাবে কাটছে এই হতভাগা পরিবারগুলোর দিনকালএকবারও এদের বিপদের কথা ভেবে এদের পাশে দাড়াচ্ছেন আপনারা ?

যেসব মস্তিস্ক বিকৃত ও বিদেশী মদতপুষ্ট লেখক মতপ্রকাশের নামে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে দেশের দীর্ঘ দিনের সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কে ফাটল ধরানো এবং সামাজিক বিশৃংখলা সৃষ্টি করছে এবং যারা ধর্মীয় অনুভূতিকে পূঁজি করে দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এদের বিরুদ্ধে সচেতন হয়ে সামাজিক ঐক্যবদ্ধ শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা অপরিহার্য হয়ে দাড়িয়েছে। 

কোন উগ্রতার মধ্যেই দেশপ্রেম থাকতে পারেনা, থাকে মানসিক তৃপ্তি এবং আর্থিক ও ব্যক্তিস্বার্থদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশ প্রেমিক তারাই, যারা দিনরাত পরিশ্রম করে একটি মজবুদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ভীত গড়ার স্বপ্নে নিরলশ কাজ করে চলছে এবং যারা দেশ ধংসকারী অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিদিন কলম হাতে,শ্লোগানে প্রতিরোধ প্রতিবাদ অব্যহত রেখে চলছে

পরিশেষে বলতে চাই, ধর্মীয় বা যে কোন চেতনা রক্ষার আন্দোলনই আমরা করিনা কেন, প্রতিটি আন্দোলনে কট্টরতা এবং উস্কানিমূলক শব্দ পরিহার করি, স্বাধীন সার্বভৌম দেশে আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা কোন সভ্য জাতির কাম্য নয়, হিংসা নয় ভালোবাসার  দিয়ে জয় করি সমস্ত মিথ্যা এবং অন্যায়কেউন্নত বিশ্ব যখন ক্ষুধা এবং দরিদ্রতাকে  জয়ের আন্দোলনে মগ্ন তখন আমরা কেন হিংসা বিদ্বেষে মত্ত হয়ে লক্ষ শহীদের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে প্রতিদিন কালিমা লেপে দিচ্ছি ?