বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০২০

মধ্যরাতের আতঙ্ক।

১৪ জুলাই রাতে ড্রয়িং রুমে ঘুমিয়েছি। রাত দুটো বাজে, গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।জাগতিক পৃথিবীর থেকে বিচ্ছিন্ন প্রায়। চারপাশে কি হচ্ছে কিছুই আমার ইন্দ্রিয়ে ধরা পড়ছে না।পাশের রুম থেকে আমার স্ত্রীর মৃদু কণ্ঠস্বর ভেসে আসছে। ওঠো ওঠো  ……
হঠাৎ তার হাতের ধাক্কায় ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসলাম।
বললাম, কি হয়েছে ?
বাইরে থেকে কেউ কলিং বেল টিপছে শুনতে পাচ্ছনা?
উত্তরে বললাম শুনিনিতো ।
এবার ঘন ঘন কয়েকবার কলিংবেলয়ের আওয়াজ হলো।
সে বলল, দরজায় গিয়ে দেখ কে সুইচ টিপছে?
এত রাতে কলিংবেল, একটু ভয় কাজ করছে ভেতরে। কে টিপছে কলিংবেল এবং কেন টিপছে?
চোখ মুছতে মুছতে দরজার কাছে দাঁড়াতে আবারও কলিং বেল বেজে উঠল। দ্বিধা সঙ্কোচ ও ভয় নিয়ে দরজা খুলতেই দেখি চেনা মুখের এক তরুণ, উদ্ভ্রান্তের মত বলছে ফু ফু, ছোরতে দো ভোতর আপারতোম, অর্থাৎ আগুন আগুন আপনার এপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে যান। আগুনে পোড়া গন্ধ নাকে ভেসে আসছে। ছেলেটি অন্য একটি এপার্টমেন্টে গিয়ে কলিং বেলের সুইচ টিপতে লাগলো। আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। আমার স্ত্রীকে বললাম বিল্ডিংয়ে আগুন লেগেছে দ্রুত বেরিয়ে যেতে হবে। আমি ঘুমের পোশাক পরেই শুধু মুঠোফোন এবং এপার্টমেন্টের চাবি পকেটে নিয়ে বের হতে উদ্যত হলাম। মেয়েকে ঘুম থেকে দ্রুত জাগানা হল।আমার স্ত্রী তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ব্যাগ সঙ্গে নিয়েই বের হল কিন্তু আমার প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র নেবার কথা মাথায় এলোনা। সম্পদের চেয়ে সময় ও জীবনের গুরুত্বকে প্রাধান্য দিয়ে দ্রুত দরজায় তালা মেরে ওদেরকে নিয়ে বিল্ডিঙয়ের সিঁড়ির দরজার কাছে চলে গেলাম। আমাদের ফ্লোরের অন্যান্য প্রতিবেশীরাও বারান্দায় বেরিয়ে এসেছে। প্রতিটি তলায় পুলিশ ও দুই আফ্রিকান বংশোদ্ভূত যুবক দরজায় দরজায় গিয়ে মানুষের ঘুম ভাঙ্গিয়ে বাহিরে বের করে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা যখন সিঁড়ি বেয়ে নামছি তখন অন্যান্য এপার্টমেন্টের পরিবারগুলো তাদের শিশু বাচ্চাদের বিছানার কম্বল জড়িয়ে তড়িঘড়ি করে নামার চেষ্টা করছে। পোড়া গন্ধ আরও প্রকট হয়ে নাকে লাগায় নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। সিঁড়ির দরজায় পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ঙ্কর এক আতঙ্কের মধ্যদিয়ে আমরা বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম। ১৩ জুলাই বিকেল থেকে আমাদের এলাকায় অসংখ্য পুলিশ সশস্ত্র অবস্থায় প্রহরারত রয়েছে। ১৪ জুলাই ফ্রান্সের জাতীয় দিবস, এই দিন রাতে সাধারণত এলাকার তরুণেরা ককটেল ফাটিয়ে আনন্দ উল্লাস করে থাকে। এই উন্মাদনার কারণে অনেক সময় নানা অঘটন ঘটে থাকে।তাই পুলিশ প্রশাসন বিভিন্ন এলাকা অতিরিক্ত নজরদারির মধ্যে রাখে।
রাস্তায় এই গভীর রাতে অসংখ্য মানুষের ভিড় জমে গেছে। পুলিশ বিক্ষিপ্ত লোকজনকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে। বিল্ডিঙয়ের দ্বিতীয় তলায় রাস্তার ধারের এপার্টমেন্টে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। আগুনের লেলিহান শিখা ক্রমেই বেড়ে চলছে। তখন ফায়ার ব্রিগেড এসে পৌঁছেনি। এপার্টমেন্টটিতে একটি পরিবারের বসবাস। এপার্টমেন্টের কলিং বেল টিপে ভেতরে অবস্থানরত মানুষদের জাগানোর চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু কোন সারা পাওয়া যায়নি। তাই, আফ্রিকান এক যুবক বিল্ডিংয়ের কার্নিশ বেয়ে চলে গেলো এপার্টমেন্টটের রারান্দায়।তার সন্নিকটে জ্বলছে আগুন কিন্তু সে সাহসিকতার সঙ্গে একটি লোহার রড দিয়ে দেয়ালের কাঁচ ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলো।বাহির থেকে ভেতরে মুখ ঢুকিয়ে সন্ধান করলো ভেতরে কেউ আছে কিনা। কিন্তু কারো সারা না মেলায় ছেলেটি নিচে নেমে এলো। আমরা যখন নিজের জীবন রক্ষায় ব্যস্ত তখন ওই যুবকটি অন্যের জীবন রক্ষার চিন্তায় নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে ভাবে আগুনের সামনে এগিয়ে গেলো তখন মনে হল পৃথিবীতে মানুষ কত মহান ও মানবিক হতে পারে। সৃষ্টিকর্তা মনে হয় কিছু মানুষকে বিশেষ অনুভূতি দিয়ে পৃথিবীতে পাঠায়। যারা অন্যের বিপদ দেখলে নিজের জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে এগিয়ে যায়
পাঁচ মিনিট পর ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি চলে এলো।ফায়ার ব্রিগেডের সদস্যরা দ্রুত আগুন নেভানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। হালকা পোশাক পরে বাহিরে চলে এসেছি, ঠাণ্ডায় শরীর কাঁপছে। বিল্ডিংয়ের সকল লোকজন রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নিয়েছে। সবাই আগুন নিয়ন্ত্রণের প্রতীক্ষায় উৎকণ্ঠিত সময় পার করছে। দ্বিতীয় তলায় আগুন লাগায় ফায়ার ব্রিগেড টিমের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে খুব বেশী কসরত করতে হল না। পনেরো মিনিটের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসল।কিন্তু অন্যতলায় আগুন ছড়িয়ে পড়েছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য আমাদের কাছ থেকে চাবি সংগ্রহ করে ফায়ার ব্রিগেডের সদস্যরা বিভিন্ন তলায় চলে গেলো।সেই সাথে পরিপূর্ণ ভাবে আগুন নেভানোর কার্যক্রম চলতে লাগলো। সম্পূর্ণ ভাবে নেভানোর কাজ শেষ হতে প্রায় ভোর চারটা বেজে গেলো।কিন্তু কারো বিল্ডিংয়ের ভেতর প্রবেশের অনুমোদন মিলছে না। ফায়ার ব্রিগেডের যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ভোর পাঁচটায় আমরা পুনরায় বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করলাম।
একটি আতঙ্কের রাত পাড়ি দিতে হল।টিভি পর্দায় শুধু গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ও বিল্ডিংয়ে আগুন লাগার দৃশ্য দেখেছি কিন্তু ঐ রাতে বাস্তবতার সম্মুখীন হলাম। যে আফ্রিকান বংশোদ্ভূত তরুণকে রাস্তার মোড়ে আরব বখাটে ছেলেদের সঙ্গে আড্ডা দিতে দেখি, সেই তরুণই আমাদের মধ্যরাতের ঘুম ভেঙ্গে জাগিয়ে তুলেছিল । অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই তোমাকে ……………
ধারনা করা হচ্ছে রাস্তা থেকে উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের ছোড়া ককটেল ফুটে এই আগুনের সূত্রপাত। যে এপার্টমেন্টটি পুড়ে ছাই হয়েছে, ঐ ফ্লাটের পরিবার গ্রীষ্মকালীন অবকাশ যাপনে বাইরে রয়েছে। একটি বাসায় একটি পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, আসবাস ও দীর্ঘদিনের সংগৃহীত সৌখিন জিনিসপত্র থাকে। নিজেদের রুচি অনুযায়ী সাজানো হয় নিজ বাসস্থল।যদিও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ক্ষতিপূরণ পাবে কিন্তু তাদের শখের সাজানো বাসাটি আগের মত করে পাবে না। দেয়ালে টাঙ্গান শখের পেইন্টিং ও সংগৃহীত সুভেনিরগুলো পাবে না । যখন পরিবারটি ফিরে এসে দেখবে রেখে যাওয়া সাজানো গোছানো নীড়টি ছাই হয়ে বাতাসে উড়াউড়ি করছে তখন কি কষ্টটাই বুকের মধ্যে জমাট বাঁধবে ............।

আতঙ্কের এক রাত  প্রথম আলো 

মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই, ২০২০

আজ ফ্রান্সে পালিত হল ভিন্ন এক জাতীয় দিবস।

অস্ত্র হাতে ও সমর পোশাকে একটি দেশকে রক্ষার দায়িত্ব শুধু সামরিক বাহিনীর উপরই ন্যস্ত থাকেনা ।একটি দেশের অভ্যন্তরে প্রতিটি পেশাজীবীও দেশকে রক্ষার ভূমিকায় সমান্তরালে অবদান রেখে থাকে ।  ডাক্তার নার্সদের ভূমিকাও যে সৈনিকের মত হতে পারে তা পূর্বে আমরা এতটা গভীর ভাবে ভেবে দেখিনি।কিন্তু করোনাকালে আমরা সেভাবে দেখছি । ফ্রান্সের অর্থনীতির অন্যতম খাত পর্যটন।এর সাথে জড়িত হোটেল, রেস্টুরেন্ট সহ নানাবিধ প্রতিষ্ঠান।এসব খাতে কর্মরত কর্মীগণ দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার ঘাম ঝরান সৈনিক। এদের শ্রমে ঘামের উপার্জন দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যয় নির্বাহ হয়। দেশকে বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষার জন্য সৈনিকের অস্ত্র ও পোশাক ঐসব ঘাম ঝরানো কর্মীদের ঘামের মূল্যে কেনা হয়। আমরা সাধারণত কাঁধের উপর রাঙ্কব্যাচ পরিহিত জেনারেলদেরকে বিশেষ ভাবে মূল্যায়ন করে থাকি । রাষ্ট্রের সম্মানের উপর নির্ভর করে একজন জেনারেলের আন্তর্জাতিক মর্যাদ।আর রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক মর্যাদা নির্ভর করে দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর। সেই ভিত্তিটাই মজবুদ করতে দিনরাত পরিশ্রম করে দেশের অর্থনীতির নানা খাতে কর্মরত কর্মীগণ।

আজ ফ্রান্সের জাতীয় দিবস। প্রতি বছর এই দিনে প্যারিসের শনজেলিজে এভিনিউ থেকে প্লাস দ্যো লা কনকর্ড পর্যন্ত থাকে দেশের সামরিক, আধা সামরিক বাহিনীর কুচকাওয়াজ ও সামরিক মহড়ার নানা আয়োজন।উপস্থিত থাকে দেশ বিদেশের সম্মানিত অতিথিবৃন্দ ।
এই আয়োজনে প্রধানত গুরুত্ব পেয়ে থাকে দেশের সামরিক বাহিনী। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় উদ্বুদ্ধ করার জন্যই এই আয়োজন।সাধারণত কুচকাওয়াজ শেষে প্লাস দ্যো লা কনকর্ড অতিথি মঞ্চের সামনে দেশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দাঁড়িয়ে মার্চপাস্ট প্রতিবেদনের ক্ষণিক সাক্ষাৎকারের জন্য অপেক্ষা করেন তিন বাহিনীর প্রধান। এভাবেই প্রতিবছর দেখি। কিন্তু এবার টিভি পর্দায় সরাসরি সম্প্রচারিত কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য সম্পন্ন ব্যতিক্রম মনে হল। ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাখোঁ’র মঞ্চের সামনে তার সাক্ষাতের জন্য অপেক্ষা করছেন তিন বাহিনীর প্রধান, তাদের সঙ্গে আরও দাঁড়িয়ে রয়েছেন কয়েকজন পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ।তারা হচ্ছে, ডাক্তার, নার্স, রেস্টুরেন্ট, হোটেল এবং অন্যান্য পেশার পোশাক পরিহিত কয়েকজন বেসামরিক মানুষ। দেখে সত্যি অভিভূত হলাম। দেশের জনগণ দেশের জন্য কাজ করবে আর দেশের সরকার জনগণকে প্রকৃত মূল্যায়ন ও সম্মান প্রদর্শন করবে।এটাই নিয়ম। সেই মূল্যায়ন ও সম্মান এতটা উঁচু পর্যায়ের তাই ভেবেই মনে হয় দুই একজন পেশাজীবী নেতৃবৃন্দকে অশ্রু ভেজা চোখে দেখা যাচ্ছিলো ।

করোনা শুধু কেরেই নেইনি , উপলব্ধির উন্মেষও ঘটিয়েছে। করোনাকালের ভেতর দিয়ে পৃথিবীর রাষ্ট্র ব্যবস্থাগুলো অন্যান্য পেশার গুরুত্ব নতুন ভাবে উপলব্ধি করছে। তারই চিত্র মিলল আজকের বাস্তিল দিবসের অনুষ্ঠানে।
Vive la France et vive la république

                                   ( লেখা কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেয়া মানে নিজের মস্তিষ্ককে নিজেই অপমান করা)

শুক্রবার, ৩ জুলাই, ২০২০

বাংলার বর্ষা, প্রবাসী মন ও করোনা কাল।

বাংলার ঋতু বৈচিত্র্যে বর্ষার আসে এক অনন্য সাজ সজ্জায়। বর্ষার সাথে বাঙালী মনের এক দারুণ সংযোগ।বর্ষা মানে রিমঝিম বৃষ্টির শব্দে হৃদয়ে শিহরণ জাগা।বর্ষা শব্দটি শুনলে, চোখে ভেসে ওঠে থোকা থোকা  ফোটা কদম ফুলের শুভ্র প্রকৃতি,যৌবন ফিরে পাওয়া নদীর বুকে ঢেউয়ের খেলা, জলে টৈটুম্বর খাল বিল, বাদল ঝরা দিনের অলস সময়ে বন্ধুদের তাসের আড্ডা অথবা অজপাড়া গায়ের বৃষ্টি ভেজা মাঠে দুরন্ত ছেলেদের ফুটবল খেলার দৃশ্য।আষাঢ়ের ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি দেখলেই মন চায় ভাপ ওঠা সর্ষে ইলিশের গন্ধে প্রাণ জুড়িয়ে জিহ্বার তৃপ্তি মেটাতে।   
বাংলার বর্ষা মানেই একাকী নির্জনে রবীন্দ্র সুরে বুঁদ হয়ে প্রথম প্রেমে পড়া প্রিয় মানুষের স্মৃতি রোমন্থন অথবা দূরে চলে যাওয়া মনের মানুষের বিরহ ব্যথায় কাতর হওয়া।আবার, হাসনাহেনা, গন্ধরাজের সুবাসিত সন্ধ্যায় দেহ মন সজীব হয়ে ওঠা। আষাঢ় শুধু নিজেই বারি ঝরিয়ে শুষ্ক প্রকৃতির প্রাণ ফিরিয়ে আনে না,বাংলার প্রেমিক প্রেমিকার হৃদয়কেও রসসিক্ত করে তোলে,প্রেমের অনুভূতিগুলো নতুন রূপে ডালপালা মেলে দেয়।হৃদয় হয়ে ওঠে কাব্যময়। তাইতো বর্ষা, বৃষ্টি ও  শ্রাবণ নিয়ে রচিত হয়েছে অজস্র কবিতা গান,যা সমৃদ্ধ করেছে বাংলা সাহিত্যকে।বর্ষা যেন বাংলার প্রকৃতিতে ঈশ্বরের বিশেষ উপহার।  
বাংলার ঋতু বৈচিত্র্যে প্রতিটি ঋতু সুশৃঙ্খলিত। বিশেষ রঙ, রস, রূপ,গন্ধে প্রত্যেক ঋতু প্রতিটির থেকে আলাদা এবং স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল। যেমন, চারিদিকে যখন প্রচণ্ড তাপদাহ,মাটি ফেটে চৌচির,মানুষ একটু শীতলতার খোঁজে গাছের ছায়া খুঁজে ফেরে,ঘাম ঝরা প্রকৃতিকে শান্ত করতে আকাশে মেঘের গুরুগর্জন ডাক ছেড়ে আষাঢ়ের আগমন ঘটে,ঝুম ঝুম বারি ঝরিয়ে প্রশান্তির পরশ এনে দেয় চারিধারে।অঙ্কুরিত হওয়ার উন্মুখ প্রতীক্ষায় থাকা উদ্ভিদ বীজ মাটি ফুঁড়ে পাতা ছড়িয়ে বেড়িয়ে আসে।খাল বিলে বয়ে যায় মাছের দলের আনন্দধারা।  
প্রবাস জীবনে বাংলার বাদল ঝরা  প্রকৃত বর্ষার স্বাদ থেকে বঞ্চিত হতে হয়।ফরাসি ঋতু পরিক্রমায় বর্ষা নামে কোন ঋতু নেই।কিন্তু এখানেও ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি ঝরে, কখনো আচমকা প্রবল বৃষ্টির ধারা এসে ধুয়ে দিয়ে যায় চারিপাশ। কিন্তু এই বৃষ্টি নিয়ে কোন উচ্ছ্বাস নেই ফরাসিদের মধ্যে, বরং বৃষ্টি জেনো ফরাসি জনগোষ্ঠীর মনে গভীর বিষণ্ণতা বয়ে আনে, বিরক্তির প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে প্রত্যেকের মুখে। ফরাসি সাহিত্যেও  মর্যাদা পায়নি বৃষ্টি বাদল। এখানকার জীবনধারার  অধিকাংশ সময় কাটে মেঘঢাকা হিমশীতল প্রকৃতির মাঝে।শৃঙ্খলহীন গোমড়ামুখো আকাশ যখন তখন এই ঠাণ্ডা প্রকৃতির মাঝে ঝিরি বৃষ্টি ঝরিয়ে বিষণ্ণ মনের নিরানন্দ আরও বাড়িয়ে তোলে।ফলে বর্ষা বাদল মুক্ত একটি আলো ঝলমল রোদেলা দিনের অপেক্ষা থাকে প্রতিটি ফরাসির মন।তাই, বৃষ্টির সৌন্দর্য ফরাসি হৃদয়ে তেমন আঁচড় কাটতে পারেনা। কিন্তু আমাদের প্রবাসী বাঙ্গালী চোখ  কখন এক পশলা বৃষ্টি ঝরার দৃশ্য দেখলে বাংলার আষাঢ় শ্রাবণ ভেবে আনন্দে শিহরিত হয়। বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ শুনলে স্মৃতিকাতর হয়ে কল্পনার  ডানায় পাখা মেলে মন  চলে যায় গ্রামের কোন টিনের চালা ঘরে।    
বাংলার ঋতু পরিক্রমায় এখন চলছে বর্ষা কাল।ঝরছে আষাঢ়ের বাদল। প্রকৃতি জেগে উঠেছে বর্ষার সৌন্দর্যে কিন্তু প্রাণের উচ্ছ্বাস থামিয়ে দিয়েছে করোনা মহামারী।যে প্রাণ বৃষ্টির ছন্দে নেচে উঠবে, সেই প্রাণে আজ মৃত্যু ভয়।ইতোমধ্যে সারা বাংলাদেশে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় আঠারোশ মানুষ। প্রত্যাশা, বর্ষার জলের ধারা যেমন ময়লা আবর্জনা ধুয়ে মুছে প্রকৃতিকে উপহার দেয় নতুন এক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চারিধার , তেমনি আমাদের একে ওপরের চেষ্টা ও সহযোগিতায় অতিশিগ্রই  করোনামুক্ত হয়ে আবার জেগে উঠবে নতুন এক উদ্যমী বাংলাদেশ।আবার বৃষ্টি বাদলের ছন্দ ঢেউ জাগাবে প্রতিটি বাঙ্গালী প্রাণে। 
বাংলার বর্ষা, প্রবাসী মন ও করোনাকাল / প্রথম আলো