মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই, ২০২০

আজ ফ্রান্সে পালিত হল ভিন্ন এক জাতীয় দিবস।

অস্ত্র হাতে ও সমর পোশাকে একটি দেশকে রক্ষার দায়িত্ব শুধু সামরিক বাহিনীর উপরই ন্যস্ত থাকেনা ।একটি দেশের অভ্যন্তরে প্রতিটি পেশাজীবীও দেশকে রক্ষার ভূমিকায় সমান্তরালে অবদান রেখে থাকে ।  ডাক্তার নার্সদের ভূমিকাও যে সৈনিকের মত হতে পারে তা পূর্বে আমরা এতটা গভীর ভাবে ভেবে দেখিনি।কিন্তু করোনাকালে আমরা সেভাবে দেখছি । ফ্রান্সের অর্থনীতির অন্যতম খাত পর্যটন।এর সাথে জড়িত হোটেল, রেস্টুরেন্ট সহ নানাবিধ প্রতিষ্ঠান।এসব খাতে কর্মরত কর্মীগণ দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার ঘাম ঝরান সৈনিক। এদের শ্রমে ঘামের উপার্জন দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যয় নির্বাহ হয়। দেশকে বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষার জন্য সৈনিকের অস্ত্র ও পোশাক ঐসব ঘাম ঝরানো কর্মীদের ঘামের মূল্যে কেনা হয়। আমরা সাধারণত কাঁধের উপর রাঙ্কব্যাচ পরিহিত জেনারেলদেরকে বিশেষ ভাবে মূল্যায়ন করে থাকি । রাষ্ট্রের সম্মানের উপর নির্ভর করে একজন জেনারেলের আন্তর্জাতিক মর্যাদ।আর রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক মর্যাদা নির্ভর করে দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর। সেই ভিত্তিটাই মজবুদ করতে দিনরাত পরিশ্রম করে দেশের অর্থনীতির নানা খাতে কর্মরত কর্মীগণ।

আজ ফ্রান্সের জাতীয় দিবস। প্রতি বছর এই দিনে প্যারিসের শনজেলিজে এভিনিউ থেকে প্লাস দ্যো লা কনকর্ড পর্যন্ত থাকে দেশের সামরিক, আধা সামরিক বাহিনীর কুচকাওয়াজ ও সামরিক মহড়ার নানা আয়োজন।উপস্থিত থাকে দেশ বিদেশের সম্মানিত অতিথিবৃন্দ ।
এই আয়োজনে প্রধানত গুরুত্ব পেয়ে থাকে দেশের সামরিক বাহিনী। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় উদ্বুদ্ধ করার জন্যই এই আয়োজন।সাধারণত কুচকাওয়াজ শেষে প্লাস দ্যো লা কনকর্ড অতিথি মঞ্চের সামনে দেশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দাঁড়িয়ে মার্চপাস্ট প্রতিবেদনের ক্ষণিক সাক্ষাৎকারের জন্য অপেক্ষা করেন তিন বাহিনীর প্রধান। এভাবেই প্রতিবছর দেখি। কিন্তু এবার টিভি পর্দায় সরাসরি সম্প্রচারিত কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য সম্পন্ন ব্যতিক্রম মনে হল। ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাখোঁ’র মঞ্চের সামনে তার সাক্ষাতের জন্য অপেক্ষা করছেন তিন বাহিনীর প্রধান, তাদের সঙ্গে আরও দাঁড়িয়ে রয়েছেন কয়েকজন পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ।তারা হচ্ছে, ডাক্তার, নার্স, রেস্টুরেন্ট, হোটেল এবং অন্যান্য পেশার পোশাক পরিহিত কয়েকজন বেসামরিক মানুষ। দেখে সত্যি অভিভূত হলাম। দেশের জনগণ দেশের জন্য কাজ করবে আর দেশের সরকার জনগণকে প্রকৃত মূল্যায়ন ও সম্মান প্রদর্শন করবে।এটাই নিয়ম। সেই মূল্যায়ন ও সম্মান এতটা উঁচু পর্যায়ের তাই ভেবেই মনে হয় দুই একজন পেশাজীবী নেতৃবৃন্দকে অশ্রু ভেজা চোখে দেখা যাচ্ছিলো ।

করোনা শুধু কেরেই নেইনি , উপলব্ধির উন্মেষও ঘটিয়েছে। করোনাকালের ভেতর দিয়ে পৃথিবীর রাষ্ট্র ব্যবস্থাগুলো অন্যান্য পেশার গুরুত্ব নতুন ভাবে উপলব্ধি করছে। তারই চিত্র মিলল আজকের বাস্তিল দিবসের অনুষ্ঠানে।
Vive la France et vive la république

                                   ( লেখা কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেয়া মানে নিজের মস্তিষ্ককে নিজেই অপমান করা)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন