বাংলাদেশের মানুষ এখন এমন এক উন্নয়ন সরকারের অধীনে জীবন যাপন করছে যে, জনগণ উন্নয়ন না চাইলেও সরকার জোর করে দেশ ও জনগণের উন্নয়ন করতে ব্যতিব্যস্ত । উন্নয়ন হলে জনগণের খুশী হওয়ার কথা ,কারণ দেশের উন্নয়ন সাথে মানুষের জীবন যাপনের মানোন্নয়নের সম্পর্ক। তবু দেশের বৃহৎ একটা অংশ এমন উন্নয়ন চাচ্ছে না বরং বিরোধিতা করে রাস্তায় নেমেছে। এই বৃহৎ অংশ আবার অন্ধ বিশ্বাসী মানুষ নয়, কারও আনুগত্য বা দালালী করে অর্থ বিত্ত বানানোর মানুষিকতা সম্পন্ন নয়, এরা যুক্তিবাদী, বিজ্ঞান মনস্ক, সচেতন এবং ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানবতাবাদী মানুষদের অংশ। এদের ডাকে সাড়া দিয়ে জেগে উঠে রাস্তায় নেমেছে দেশের বৃহৎ তরুণ প্রজন্ম। যে প্রজন্ম কোন টেণ্ডার পাওয়া, বা মিছিল শেষে খিচুড়ি খাওয়ার আশায় এই ডাকে সাড়া দেননি কিংবা ভবিষ্যতে কোন মন্ত্রী, এম পি হওয়ার পথকে সুগম করার জন্যও সাড়া দেননি। তারা উপলব্ধি ও যুক্তির নিরিখে বুঝতে পেরেছেন সুন্দরবনের নিকটবর্তী রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপিত হলে জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন হুমকির সম্মুখীন হবে।একজন ব্যক্তির গোঁয়ারতুমিতে এই বন ধ্বংস হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অভাবনীয় প্রাকৃতিক বিপর্যয় সহ নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হবে, এই চেতনার জায়গা থেকেই নিজের পকেটের পয়সা ও সময় ব্যয় করে তারা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে। তাদের আন্দোলন ভাষা ও প্রতিবাদের মাধ্যমগুলো সভ্য,মার্জিত,সুশৃঙ্খল এবং সৃজনশীল। তবুও কেন সরকার একবারের জন্যও এই মানুষগুলোর কথা শোনার প্রয়োজন অনুভব করছে না?
এখানে বুঝতে হবে, আমরা সাধারণ দৃষ্টিতে উন্নয়ন বলতে যা দেখি বা বুঝি,ক্ষমতাসীনরাও কি একই ভাবে বোঝে? পার্থক্যের বিস্তর ফারাক এখানেই। আমরা উন্নয়ন বলতে সাধারণ মানুষের স্বার্থকে বুঝি। আর ক্ষমতাসীনদের উন্নয়ন হল প্রকল্প বরাদ্দের নামে কিছু মানুষের মধ্যে অর্থ ভাগবাটোয়ারা করে বিদেশে পাচার করা। এই জায়গায় বাধা এলে কে ছেড়ে দ্যায়। প্রজাতন্ত্রের সকল শক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা তাদের হাতে। প্রয়োজন হলে প্রজাতন্ত্রের বৈধ শক্তিকে অবৈধ ব্যবহার করে হলেও নিজ স্বার্থ উদ্ধার করবে।অবৈধ ও স্বার্থান্বেষীদের চরিত্র এমনই হয়ে থাকে।
বর্তমান চলমান আন্দোলনকারীদের সাথে আজকের দানবীয় সরকারের মূল দ্বন্দ্ব এখানেই।
তবে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের ইস্যুতে যে তরুণ প্রজন্মের সমর্থনে আজকের সরকারের এই দানবীয় রূপ, সেই তরুণ প্রজন্মই জাতিয় স্বার্থে ঘুরে দাঁড়িয়েছে আপনাদের বিপক্ষে, সুতরাং রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থার আশীর্বাদে স্থিতিশীল হওয়ার সুবাদে এই উপলব্ধি আজ না হলেও, বাস্তবতা দিয়ে সেই উপলব্ধি করার সময় শুধুই সময়ের ব্যাপার মাত্র ......।