বুধবার, ২০ আগস্ট, ২০২৫

রাষ্ট্র সংস্কারের আগে দরকার দেশের রাজনীতি সংস্কার

একটি দেশের রাজনৈতিক দলগুলো অভিভাবকের ভূমিকা পালন করে থাকে।একটি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে প্রতিটি রাজনৈতিক দল সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভূমিকায় অবতীর্ণ । যাদের হাতে রাষ্ট্রের সম্পদ ও জনগণের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব , সেই রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের মজ্জাগত ধারনা যদি হয়,  রাজনীতি করে আয় করা যায়, ভোগ বিলাস করা যায় ,পাওয়ার দেখানো যায়, অপরাধ করে মাপ পাওয়া যায়, তবে ঐ দেশে একশটা বিপ্লব সংগঠিত হলেও মৌলিক কোন পরিবর্তন হবে না ।বাংলাদেশে বাম, ডান, মোল্লা, পুরোহিতদের যে দলই ক্ষমতার সংস্পর্শে গেছে  তাদের নেতা কর্মীদের অধিকাংশই মহাজন হয়ে রাজনৈতিক নেতার পরিচয় হারিয়ে ফেলেছে । দেশ সংস্কার করার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর চরিত্র সংস্কার এ মুহূর্তে অতীব জরুরি, কারণ সাংবিধানিক নিয়মে অবশেষে দেশটা রাজনৈতিকদলগুলোই চালাবে । বাংলাদেশের যত নৃশংস কর্মকাণ্ড সংগঠিত হয় তার কারণ খুঁজতে গেলে দেখা যায় প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক সংযোগ বা সূত্র রয়েছে ।স্বাধীনতা পরবর্তী ৫৪ বছরে দেশের শাসন ও বিচার ব্যবস্থাকে কতোটা দেওলিয়ার পর্যায়ে পৌঁছে দেয়া হয়েছে তা অনুধাবন করা যায়  প্রকাশ্য দিবালোকে খুন, ধর্ষণের মত অপরাধ সংগঠিত হওয়ার চিত্রগুলো দেখে। যেখানে রাজনীতি করা  একজন মানুষের  এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর কথা, সেখানে আমাদের দেশে প্রতিটি অপরাধী বড় বড় অপরাধ সংগঠিত করে থাকে রাজনৈতিক পরিচয়ে এবং  রাজনৈতিক শক্তি সাহসকে অবলম্বন করে।রাজনীতির মূলনীতি যদি হয় মানবকল্যাণ তবে রাজনৈতিক দলের সংস্পর্শে গিয়ে একজন মানুষ হয়ে উঠবে সমাজের সেরা মানবিক মানুষ, অথচ আমরা এতো বছরে এমন এক  রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলেছি যে রাজনৈতিক দলের সংস্পর্শে গেলে একজন বৃদ্ধ থেকে তরুণ চাঁদাবাজির মত ভিক্ষাবৃত্তিকে জীবিকা বানিয়ে ফেলে, সেটা করতে গিয়ে প্রয়োজনে মানুষ খুন করতে একটুও দ্বিধা করে না।দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এক একটি রাজনৈতিক দল যেন এক একটি চাঁদাবাজ আর নীতিভ্রষ্ট মানুষ উৎপাদনের ফ্যাক্টরিতে পরিণত হয়েছে। আমাদের  জাতিগত এই সামগ্রিক অবক্ষয়ের দায়ভার দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের। কারোরই এই দায়ভার এড়ানোর সুযোগ নেই ।তাই রাজনৈতিক দলগুলোর চরিত্র সংশোধন ও সংস্কার না করে ব্যবাসায়িক মনোবৃত্তির রাজনৈতিক দলগুলোর  হাতে দেশ তুলে দেয়া আর শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা দেয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য খুঁজে পাই না ।

বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী, ২০২৫

দোষ গুনে মানুষ

১ । আমরা প্রতিটি মানুষ দোষ গুনের এক সমন্বয় সত্ত্বা । আমরা প্রবৃত্তির তাড়নায় বা রিপুর তাড়নায় ভুল করি , আবার আমাদের ভেতরের দেবত্ব গুনের কারণে মহৎ মানুষে রূপান্তর হই । বলতে পারি মানুষ তার কর্ম বা গুনের দ্বারা দেবত্ব গুনের অধিকারী আবার এই মানুষই তার কর্মের দ্বারা অসুরে পরিণত হয়ে ওঠে । 

মানুষের ভুল বা অন্যায় করা দোষের নয়।মানুষের ভুল করে ভুল বুঝতে পারা এবং  ভুলের অনুসূচনা থেকে  নিজেকে সংশোধনের মধ্যে অন্তর্নিহিত মানুষের মহত্ত্ব । 

ফরাসি বিখ্যাত ঔপন্যাসিক ভিক্টর হুগোর  লো মিজারেবল উপন্যাসে মিরিয়েল নামে একটি পাদ্রির চরিত্র রয়্যেছে।মিরিয়েল একটি ধর্মীয় চরিত্র হলেও লেখক তাকে খুব আধুনিক, যুক্তিবাদী এবং খুব মানবিক ভাবে উপস্থাপন করেছেন ।পাদ্রি মিরিয়েলের একটি কথা আমাকে দারুণ ভাবে সব সময় স্পর্শ করে «  একজন মহাপাপীর চোখের এককোনে জমা অনুতাপের একবিন্দু জল এক শত পাদ্রির সাদা শুভ্র পোশাকের চেয়ে পবিত্র। অর্থাৎ, আমার মধ্যে মহত্ত্ব বলে যদি কিছু থাকে তবে অনুতাপের উদয় হবে । আর অন্যায় করে যদি অনুতাপ বা অনুসূচনা হৃদয়ে না জাগে বুঝে নিতে হবে মানুষ রূপে জন্মেছি ঠিক কিন্তু মানুষ হতে পারিনি ।  

  

২ । আমরা দোষ গুনে মানুষ হলেও আমাদের প্রধান কাজ হল, নিজের দোষ ত্রুটি সংশোধনে মনোযোগ দেয়া  আর অন্যের ভালোগুনের প্রশংসা করা । একজন মানুষ পেটের দায়ে  চোর বা ডাকাত হতে পারে কিন্তু এমন মানুষও কখন কখন সমাজ সংসারে অনেক ভালো কাজের ছাপ রাখে । আমরা যদি তার চুরি ডাকাতির অপকর্মের জন্য বারংবার  ধিকৃত না করে তাকে কাছে বসিয়ে তার অল্প ভালো কর্মের প্রশংসা করি  তবে দেখা যাবে এক সময় তার মধ্যে মহৎ অনুভূতির উদয় হয়ে সে ভালো মানুষ হয়ে গেছে। আর যদি প্রতিনিয়ত তাকে ধিক্কার জানাই তবে সমাজ ও মানুষের প্রতি তার ক্রোধের উদয় হয়ে আরও ভয়ঙ্কর মানুষে রূপান্তর হবে । 


৩। আমাদের সমাজে দারুণ একটা ধারার প্রচলন রয়েছে , তাহলো কারো সম্পর্কে বাস্তবে কোন কিছু  না জেনে মনগড়া একটা নেতিবাচক মন্তব্য  ছুড়ে দেয়া । অথবা,অন্যের কাছ থেকে কারো সম্পর্কে কিছু শুনে নিজে সেই বিষয়ের  বস্তুনিষ্ঠতা  যাচাই না করে অন্যের কাছে একটা নেতিবাচক মন্তব্য করে দেয়া ।আমরা কি একবার ভাবি,  আমার নেতিবাচক মন্তব্যের কারণে একজন মানুষের জীবনের গতি প্রকৃতি ওলট পালট হয়ে যেতে পারে । তার ওই ক্ষতির জন্য আপনি দায়ী, এই ক্ষতির প্রভাবে ওই ব্যক্তির প্রতি মুহূর্তের যে কষ্ট তার জন্য আপনি দায়ী । 


পরনিন্দা বা পরচর্চা যেটাকে ইসলামের পরিভাষায় বলে গিবত । 

রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘গিবত কাকে বলে? তোমরা কি তা জানো?

উপস্থিত সবাই বললেন, ‘আল্লাহ আর তাঁর রাসুল (সা.) ভালো জানেন।’

রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন বললেন, ‘জিকরুকা আখাকা বিমা ইয়াকরাহু।’ অর্থাৎ ‘গিবত হচ্ছে তোমার ভাইয়ের এমন কথা (দোষ) বর্ণনা করা, যা শুনলে সে অসন্তুষ্ট হবে।’ কারও অনুপস্থিতিতে অন্যের সামনে তার দোষ নিয়ে আলোচনা করাই গিবত।

সাহাবিরা প্রশ্ন করলেন, বর্ণনা করা দোষ যদি ওই ভাইয়ের (আলোচিত ব্যক্তিটির) মধ্যে থাকে, তাহলেও কি তা গিবত হবে?

রাসুল (সা.) বললেন, যদি তা সঠিক থাকে হয়; তবেই তা গিবত। অন্যথায় তা হবে অপবাদ। (মুসলিম, হাদিস: ৬৩৫৭; বুখারি, হাদিস: ৫৬১৩)


আমাদের সমাজে মানুষের মধ্যে গীবতের চেয়ে অন্যকে অপবাদ দেয়ার প্রবৃত্তি দারুণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে । আমরা কেন একবার চিন্তা করিনা , আমি যে মানুষের নামে অপবাদ লটিয়ে দিলাম, সেই  অপবাদ যত মানুষের নিকট ছড়িয়ে পড়লো তার  পাপ সমস্তটাই আপনার আমলনামায় যুক্ত হল এবং এই অপরাধের  জবাবদিহিতার জন্য একদিন আপনার স্রষ্টার সম্মুখীন হতে হবে । 

তাছাড়া, যখন প্রমাণ হবে এটা আপনার দ্বারা লটানো নিছকই অপবাদ তখন সমাজের মানুষের কাছে আপনার গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে গিয়ে ঠেকবে । কেউ আপনাকে আর বিশ্বাস করবে না । 


আমরা মানুষ, আমাদের নশ্বর এই পৃথিবী একদিন ছেড়ে দিতেই হবে ,যে চর্চার মধ্যে অন্যের কল্যাণ নিহিত সেই চর্চার ভেতর দিয়ে মানুষ হয়ে ওঠার চেষ্টা করি,ছেড়ে যাওয়ার আগে যদি একটু মানুষ হয়ে এই পৃথিবী ছেড়ে যেতে পারি তবে সেই জীবনের মধ্যে লুকায়িত মানুষ হয়ে জন্ম নেয়ার সার্থকতা ।মানুষ হয়ে জন্ম নিয়ে যদি পশু হয়ে মৃত্যু বরণ করি তাহলে কি সার্থকতা হলো মানব দেহে বসবাস করার।