সদ্য শরীরের কাঁটাছেড়া অংশে সকাল থেকে ব্যথার তীব্রতা বেড়েই চলছে। ব্যথানাশক ঔষধ সেবনে উপশমের চেষ্টা। ব্যথা নিয়েই মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে বাসায় একাকী দিন যাপনের প্রস্তুতি। প্রকৃতি আগাম আভাস না দিয়ে হঠাৎ করেই শুরু করেছে বাতাসে তুষারের ওড়াউড়ি। যে দৃশ্যর অবতারণ সাধারণত প্যারিসে খুব একটা মেলেনা। মনে হল দিনটা বাড়তি প্রাপ্তি দিয়ে শুরু হল। ড্রয়িং রুমের প্রতিটি পর্দা তুলে দিয়ে সোফায় শুয়ে শুয়ে প্রকৃতির আপন মনে এমন খেলা করার দৃশ্য হৃদয়ে এক ভিন্ন রকম শিহরণ জাগিয়ে মুহূর্তগুলো রাঙিয়ে দিচ্ছে। বেলকোনিতে মাঝে মাঝে দুটো কালো কবুতর এসে সঙ্গ দিয়ে আবার উড়ে চলে যাচ্ছে। সাথে প্রিয় রবি সুর। স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী হলাম প্রকৃতির এমন আতিথেয়তায়!
এমন ভালোলাগা শুধু নিজে উপভোগ না করে প্রযুক্তির আশ্চর্য উদ্ভাবন ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে কিছু সময় ভাগাভাভাগি করলাম বন্ধুদের সঙ্গে। কিছুক্ষণের মধ্যে সামনের ছোট্ট পার্কটির সমতল ভূমির উপর প্রকৃতি তুষারের সাদা মাদুর বিছিয়ে দিলো। বৃক্ষরাজির শাখাগুলোর কাণ্ড পরিণত হল থোকা থোকা সাদা পুষ্পের ন্যায়।
মনে হল, প্যারিসের এমন রূপের দিকে তাকালে প্রেমে পড়বেনা এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াই দায়। শত শত বছর ধরে হাজার হাজার শিল্পী প্যারিসের রুপের উৎকর্ষ সাধনের যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তা আজ পণ্ডশ্রমে পর্যবসিত। প্যারিসের আজকের রূপের কাছে শিল্পকলার সমস্ত সৃষ্টিই যেন পরাজিত! যে হৃদয় পাথরসম অনুভূতিহীন প্যারিসের আজকের প্রকৃতি সেই হৃদয়ে প্রাণের সঞ্চার করতে দুহাত বাড়িয়ে ডাকছে। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য ক্যামেরা হাতে বেড়িয়ে পড়েছে অসংখ্য সৌন্দর্য় পিপাসু্ মানুষ নিজেকে স্মৃতি করে রাখার জন্য। বৃষ্টির দিনে বাংলার দুরন্ত কিশোর-কিশোরী যেমন বৃষ্টিতে ভিজে তার দুরন্তপনা ও দুুষ্টুমিতে প্রকৃতির হেয়ালিপনাকে সার্থক করে তোলে, তেমনি প্যারিসের বুকে বেড়ে ওঠা দুরন্ত কিশোর-কিশোরীর দলও প্রকৃতির এই উৎসবের দিনে উজার করে উচ্ছ্বাস ঢেলে দিচ্ছে। বাংলার বর্ষা, বসন্ত, শরৎ যেমন প্রেমিক প্রেমিকার মনে দোলা দেয়, অনুভূতিতে ভিন্নতা আনে, হৃদয়ের রংয়ের বৈচিত্রতা আনে, পশ্চিমা প্রেমিক-প্রেমিকার হৃদয়ে আমাদের মতো এতো বৈচিত্র্য না থাকলেও আজকের প্যারিসের প্রকৃতি অবশ্যই ওদেরকে রোমাঞ্চিত করছে।
তুষার শুভ্রতায় নবরূপে উদ্ভাসিত প্যারিস নগরী
আলোকচিত্র: মুহাম্মদ গোলাম মোর্শেদ,
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন