রবিবার, ২১ মার্চ, ২০২১

পেই দো লা লোয়ার'য়ে চারদিন। পর্ব - ৩ ( ছা-নাজায়ার)


মাঝে আমাদের হাতে আছে দুই দিন।পরিকল্পনা রয়েছে আমরা একদিন কাটাবো ছা নাজায়ার শহরে অন্য দিন পর্ণিক সমুদ্র সৈকতে। দুটিই ফ্রান্সের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল।রাতে বাসায় এসে সিদ্ধান্ত নিলাম পরের দিন আমরা ছা নাজায়ার যাবো।রাতেই নন্ত থেকে ছা নাজায়ারের যাওয়ার জন্য ইন্টারনেটে বাস, ট্রেন ও ব্লা ব্লা কারের টিকেট অনুসন্ধান করলাম। ভ্রমণ মূল্য ও আমাদের সুবিধাজনক সময় অনুযায়ী ব্লাব্লাকারের  টিকেট বুকিং করলাম। আমাদের যাত্রার সময় দুপুর বারোটা।আমাদের বাসা থেকে ট্রামে প্রায় ত্রিশ মিনিট পথ ওরভল্ট(Orvault)  ট্রাম স্টেশন।ওখানেই আমাদের রিজার্ভ করা কার নির্ধারিত সময়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে। 

১১ আগস্ট ২০১৯, যাত্রা সময় দুপুর বারোটায় হওয়ায় সকালের প্রস্তুতিটা তাড়াহুড়া ছাড়া বেশ আরাম আয়েশেই হল। আমরা সময় মেপে বাসা থেকে বের হলাম ছা নাজায়ার এর উদ্দেশ্যে।ট্রামে করে যেতে হবে ওরভল্ট। আমরা গোগল মাপে সময় দেখে যে সময়ে ট্রামে উঠলাম তাতে যথা সময়ের পূর্বেই আমরা ওরভল্ট পৌঁছে যাবো। নন্ত এর মূল শহর থেকে অনেক দূরে ওরভল্ট ট্রাম স্টেশন। তাই যাবার পথে শহরতলির বাড়িঘর ও মানুষের জীবন যাপনের প্রতিচ্ছবি ট্রামের জানালা দিয়েই অনেকটা দেখা হল।আমাদের দেশের জেলা শহরের অভিজাত এলাকাগুলোর সাথে বেশ সাদৃশ্য রয়েছে। গ্রামের মধ্য দিয়ে ট্রাম অনেকগুলো স্টেশন পার হওয়ার পর হঠাৎ একটি স্টেশনে এসে থেকে রইলো। চালক ঘোষণা দিলেন ট্রাফিক সমস্যার কারণে ট্রাম এই স্টেশনে অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবস্থান করবে,এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য সে যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলল,যাদের তাড়া রয়েছে তারা নেমে বাসে করে তাদের গন্তব্যে পৌঁছুতে পারে।ভালোই লাগছিল, হঠাৎ মনে হল মাথায় বাজ পড়লো। পনেরো মিনিটের মধ্যে আমাদের ওরভল্ট পৌঁছুতে হবে তা নাহলে আমাদের কার মিস করবো। এমন মুহূর্তে কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম , ট্রামেই অপেক্ষা করবো, নাকি নেমে বাসের খোঁজ করবো। নতুন জায়গা, কিছুই চিনিনা, কোথায় বাস স্টেশন।কাউকে জিজ্ঞেস করে স্টেশন খুঁজে পাবো কিন্তু হাতে সময় নেই এসব করার।মনে হল আমাদের ছা-নাজায়ার যাত্রা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেলো। ট্রাম থেকে অনেক যাত্রী নেমে গেলো। বেশ হতাশা নিয়ে ট্রামে কিছুক্ষণ বসে রইলাম, কি করবো ভেবে। ফরাসি দেশের মানুষ সময় মেপে চলে। নির্ধারিত সময়ের পর কেউ কারো জন্য অপেক্ষা করে না। বারোটার পর হয়তো আমাদের রিজার্ভ কার আমাদের জন্য প্রতীক্ষায় না থেকে ছা নাজায়ার চলে যাবে। 


২০১৬ সালে আমরা গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটাতে ফ্রান্সের ক Cean শহরে গিয়েছিলাম।প্যারিস থেকে ক  শহরে যাবার জন্য ফ্লিক্স বাসের টিকিট রিজার্ভ করেছি পঁচাত্তর ইউরো দিয়ে। আমাদের বাস ছাড়বে শার্ল দ্য গোল এয়ারপোর্টের কাছাকাছি একটি স্টেশন থেকে। আমাদের বাসা থেকে ট্রেনে চল্লিশ মিনিটের পথ। হাতে প্রায় অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিট রেখে বাসা থেকে বের হলাম।যথা সময়ে প্যারিসের গার দো নরদ স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠলাম। ট্রেন কয়েক স্টেশন যাবার পর ঘোষণা দিলো, ট্রেন লাইন মেরামত জনিত কারণে ট্রেন এয়ারপোর্ট যাবে না। যাত্রীদের এয়ারপোর্টে পৌঁছানোর জন্য স্টেশনের পাশে অটোবাস সার্ভিস খোলা হয়েছে, সবাইকে অটোবাসে ওঠার অনুরোধ করা হল।ঘড়ি দেখে মনে হল, হাতে সময় আছে, যথা সময়েই আমরা বাস স্টেশনে পৌঁছুতে পারবো। লাইন ধরে বাসে ওঠা ও শৃঙ্খলার সহিত লাগেজ বাসের বাঙ্কারে রাখা ইত্যাদিতে অনেকে সময় পার হল। তার পর বাস অতোরুত বা মহাসড়ক দিয়ে অনেক পথ ঘুরে ঘুরে এয়ারপোর্টের কাছাকাছি আর একটি ট্রেন স্টেশনের কাছে সমস্ত যাত্রীদের নামিয়ে দিলো।আমরা বেশ কিছু পথ হেঁটে ট্রেন স্টেশনে এসে ট্রেনের প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে রইলাম। টাইম বোর্ডে ট্রেন ছাড়ার যে সময় দেখাচ্ছে সেই সময়ে ট্রেন ছাড়লে আমরা বাস ধরতে পারবো কিনা অনেকটা দ্বিধায় পড়ে গেলাম।মনে হল, হয়তো ঘড়ির কাঁটায় কাঁটায় গিয়ে পৌঁছে যাবো। তাই ভেবে বাসের টিকেট ক্যানসেল না করে ট্রেনে উঠলাম। ট্রেনে উঠে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চরম অনিশ্চয়তা অভুভব হল। বাসের কাস্টমার সার্ভিসে ফোন করলাম টিকেট বাতিলের জন্য কিন্তু ফোনের অপর প্রান্তের কাস্টমার সার্ভিস কর্মকর্তা জানালেন, আপনারা টিকেট বাতিলের নির্ধারিত সময়ের দশ মিনিট পার করে ফেলেছেন, তাই টিকেট বাতিল করা সম্ভব হচ্ছে না।কি আর করা, নিজেদেরকে ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়ে ট্রেনে বসে রইলাম।বাস ছাড়ার নির্ধারিত সময়েই আমরা ট্রেন স্টেশনে নামলাম কিন্তু ট্রেন স্টেশন থেকে লাগেজ নিয়ে দৌড়ে বাস ষ্টেশনে পৌঁছুতেই প্রায় তিন মিনিট লেগেগেলো।স্টেশনে ফ্লিক্সি বাসের এক দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে টিকেট দেখিয়ে আমাদের বাসের খবর জানতে চাইলাম। কর্মকর্তা বাস স্টেশন থেকে প্রায় বেরিয়ে যাওয়া মুহূর্তের একটি চলন্ত বাস নখ দিয়ে দেখিয়ে বলল, ওইটি আপনাদের বাস, এই মাত্র স্টেশন থেকে ছেড়ে চলে গেলো।মাথায় হাত রেখে অবাক দৃষ্টিতে বাস চলে যাওয়া দেখলাম,তারপরও কষ্টের মাঝে একটু স্বস্তি নিঃশ্বাস নিলাম। অপ্রত্যাশিত ভাবে ট্রেন থেকে অটোবাসে ওঠার পর এখানে পৌঁছুনো পর্যন্ত স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে প্রতি মুহূর্তে যে উৎকণ্ঠা সময় পার করলাম তাতে মনে হল বাস মিস করলেও দেহ মনতো একটু প্রশান্তি পেলো। ক’তে হোটেল বুকিং করা রয়েছে।দুপুর বারোটার পর থেকে হোটেলের অভ্যর্থনা কর্মীরা আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে।একবার চিন্তা করলাম, হোটেলের বুকিং বাতিল করে ভ্রমণ স্থগিত করে দেই।বাসে করে আবার বাসায় ফিরে এলাম।ইন্টারনেটে আবার প্যারিস থেকে ক’তে যাওয়ার টিকেট সন্ধান করতে লাগলাম। টিকেট পাওয়া গেলো কিন্তু আগের ক্ষতি হওয়া টিকেটের মূল্যের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণে এবং যাত্রার সময় বিকেল পাঁচটা।মেয়ের ও তার মায়ের ইচ্ছা ও আশাকে প্রাধান্য দিয়ে আবার বাসের টিকেট করলাম।এই ঘটনা থেকে ভবিষ্যতের জন্য একটি বাস্তব শিক্ষা অর্জন হল, তাহলো বাসা থেকে যদি দূরবর্তী ভ্রমণের এয়ারপোর্ট বা ষ্টেশন অনেক দূরে অবস্থিত হয় এবং সেখানে পৌঁছুতে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যাবহারের পরিকল্পনা থাকে তাহলে অবশ্যই ভ্রমণের পূর্বের দিন ঐ পাবলিক ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির ওয়েবসাইটে গিয়ে ভালো করে খোঁজ নিতে হবে,ভ্রমণের দিন কোন কারণে ওই রুটে ট্রাফিক সমস্যা রয়েছে কিনা। তা ভালোভাবে নিশ্চিত হয়ে সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে এবং সময় হাতে নিয়ে বাসা থেকে বের হতে হবে।তা নাহলে এমন হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা থেকেই যায়। যা না করায় আমাদের এমন হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়েছিলো ঐ দিন। 


ট্রামে বসে ঐ দিনের কথা দারুণ ভাবে স্মরণ হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো আবার সেই পুরনো ঘটনার হয়তো পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় বেশ মর্মাহত হলাম। ছা-নাজায়ার যাত্রা ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়ে তিনজনে বাসে করে ওরভল্ট ষ্টেশনে পৌঁছুনোর জন্যে উদ্যত হলাম। ট্রাম থেকে নেমে ষ্টেশনে দাঁড়িয়ে স্থানীয় এক ব্যক্তির নিকট বাস ষ্টেশনের খোঁজ করছি এমন সময় ট্রাম চালক পুনরায় ঘোষণা দিলেন ট্রাফিক সমস্যার সমাধান হয়েছে, যাত্রীদের ট্রামে মধ্যে অবস্থান নেয়ার অনুরোধ করে বললেন ট্রাম কিছুক্ষণের মধ্যে ষ্টেশন ছেড়ে যাবে।চরম এক স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে পুনরায় ট্রামে অবস্থান নিলাম।আমাদের নির্ধারিত সময়ের দুই মিনিট পূর্বে অর্থাৎ এগারো আটান্ন মিনিটে ট্রাম এসে পৌঁছুল ওরভল্ট ষ্টেশনে। ট্রাম থেকে নেমেই ফোন দিলাম আমাদের রিজার্ভ কারের চালককে।চালক ষ্টেশনের পাশে অবস্থিত পেট্রোল পাম্পের কাছে যেতে বলল।পাম্পে অনেক গুলো মাঝারী প্রাইভেট কার পার্ক করা রয়েছে ।এর মধ্যে একটি কারের পাশে দাঁড়িয়ে এক যুবক সিগারেটের ধোঁয়ার স্বাদ নিচ্ছে। যুবকটি আমাদের তিনজনকে দেখে হাত ইশারা করলেন। ব্লাব্লাকারের অ্যাপে প্রদর্শিত ছবির সাথে মিলিয়ে নিশ্চিত হলাম এই যুবকই আমাদেরকে তার কারে করে ছা-নাজায়ার নিয়ে যাবে।যুবকটির নাম ওরেলিয়, বেশ আন্তরিক। আমাদেরকে কারের মধ্যে তুলে ওরেলিয় কিছুক্ষণের মধ্যে ওরভল্ট ষ্টেশন ছেড়ে রওনা হলেন ছা নাজায়ার শহরের দিকে। যুবকটি স্বল্পভাষী,মহাসড়কে প্রবেশ করে আপন মনে কার চালিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলেন।আমরা তিনজন গাড়ীর কাঁচের ভেতর থেকে কৌতূহল ভরে ফরাসি গ্রামীণ কৃষি ভূমি, বাড়ী ঘর, বনবাদার দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।   


ব্লাব্লাকার সম্পর্কে ধারণা ছিল কিন্তু পূর্বে কখনো ব্যবহার করা হয়নি।তাই একটু সংশয় ছিল।কেমন হবে ইন্টারনেটে যোগাযোগ করে অচেনা কোন মানুষের প্রাইভেট গাড়িতে কোথাও যাওয়া। এই প্রথম ব্লাব্লা কারে কোথাও যাচ্ছি। 

ব্লাব্লাকার মূলত ইন্টারনেট অ্যাপ ভিত্তিক একটি যাত্রী সেবা প্রতিষ্ঠান। ইউরোপের বহুল ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় একটি অ্যাপ।ইউরোপে যাদের প্রাইভেট গাড়ী ও গাড়ী চালানোর লাইসেন্স রয়েছে তারা এই অ্যাপে নাম নিবন্ধন করতে পারে।এখানে নিবন্ধনকৃত প্রাইভেট গাড়ীর চালকরা যখন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায় তখন তার পেছনের ও সামনের বসার সিটগুলো ভাড়া দেবার জন্য এই অ্যাপ বিজ্ঞাপন দেয়। বিজ্ঞাপনে প্রতি সিটের ভাড়া,যাত্রী তোলার স্থান,সময়,তারিখ এবং যাত্রী নামিয়ে দেবার স্থান উল্লেখ থাকে।এছাড়া চালক যাত্রাকালীন সময়ে যাত্রীদের সঙ্গে গল্প করতে পছন্দ করেন কিনা তাও উল্লেখ করেন। পূর্বে যেসব যাত্রী তার সেবা গ্রহণ করেছেন তাদের সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির মূল্যায়ন,চালক হিসেবে সে কোন গ্রেডের এবং একটানা কত কিলোমিটার গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে তার বিবরণ ইত্যাদি তথ্য উল্লেখ থাকে চালকের ব্লাব্লা কার অ্যাপের ব্যক্তিগত প্রোফাইলে। কোন যাত্রী ব্লাব্লা কারে সিট রিজার্ভ করার পূর্বে চালক সম্পর্কে এই তথ্যগুলো ভালোভাবে লক্ষ্য করে থাকেন।মোবাইল অ্যাপ অথবা ব্লাব্লাকারের https://www.blablacar.fr/ ওয়েব সাইটে গিয়ে যাত্রা শুরুর স্থান,গন্তব্য এবং সময় ও তারিখ উল্লেখ করে সার্চ দিলে চালকদের দেয়া বিজ্ঞাপনগুলো স্কিনে ভেসে ওঠে, তখন যাত্রীরা তার পছন্দ মত চালকের গাড়ির সিট ব্যাংক কার্ড অথবা পে-পালের মাধ্যমে পরিশোধ করে রিজার্ভ করে থাকেন।একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বুকিং বাতিল করার সুবিধাও রয়েছে।

ব্লাব্লাকারের কার চালকরা মূলত পেশাদার যাত্রীসেবামূলক কার চালকদের মত নয়। পেশাদার কার চালকদের মত গাড়ী চালিয়ে অর্থ উপার্জন করা তাদের পেশা নয়।এরা প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্ন পেশার মানুষ।এরা কার চালায় নিজেদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে।যখন ব্যক্তিগত প্রয়োজনে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায় তখন কারের ফাকা সিটগুলোতে যাত্রী তোলার জন্য ব্লাব্লাকারের নিবন্ধিত প্রোফাইল থেকে বিজ্ঞাপন দেয়। যদি যাত্রী পেয়ে যায় তাহলে অন্য স্থানে যাওয়ার জন্য চালকের জ্বালানী বাবদ যে অর্থ খরচ হয় তা ঐ যাত্রী ভাড়ার টাকায় মিটে যায়। এতে চালককে জ্বালানী বাবদ নিজের পকেট থেকে আলাদা করে অর্থ ব্যয় করতে হয় না। অনেকে গল্প করতে পছন্দ করেন, দূরের পথ হলে একাকীত্ব ভাব দূর  হয়।এই সব সুবিধার জন্যই মূলত এখানকার অনেক ব্যক্তিগত কার চালক ব্লাব্লাকারে বিজ্ঞাপন দিয়ে যাত্রী সংগ্রহ করেন। একারণেই ব্লাব্লাকারে ভ্রমণ সাশ্রয়ী।অধিকাংশ সময় ইউরোপের ট্রেন ও দূরবর্তী বাসের ভাড়ার তুলনায় ব্লাব্লাকারের ভাড়া অনেক কম হয়ে থাকে।


ব্লাব্লাকার কোম্পানির বাস সার্ভিস রয়েছে, তবে কার সার্ভিস সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয়। 

প্যারিসের পার্শ্ববর্তী আটটি দেপারত্তম বা জেলা নিয়ে গঠিত ইল্‌-দ্য-ফ্রঁস রেজিও। এটি ফ্রান্সের অন্যতম জনবহুল অঞ্চল।এক কোটি মানুষের উপরে বসবাস। প্যারিস শহরকে কেন্দ্র করে প্রতিটি জেলার সঙ্গে সহজ যোগাযোগের জন্য এই অঞ্চলে জালের মত ছড়িয়ে রয়েছে রেল সংযোগ।ইল্‌-দ্য-ফ্রঁস এর যেকোন এলাকার রেল স্টেশনে দাঁড়িয়ে দশ মিনিট অপেক্ষা করলেই লোকাল ট্রেনে চড়ে প্যারিসে আসা যায় আবার প্যারিস থেকে সহজেই যাওয়া যায় অন্য জেলায়।ইল্‌-দ্য-ফ্রঁস অঞ্চলের মধ্যে প্যারিস শহরের বাইরে বসবাসরত যারা প্যারিসে চাকুরী করেন তাদের অনেকেই বাসা থেকে কার চালিয়ে ট্রেন স্টেশনে আসেন।কার ট্রেন স্টেশনে পারকিং করে ট্রেনে চেপে আসেন প্যারিসে, আবার কর্ম শেষে ট্রেনে করে ফিরে যান নিজ শহরে।ট্রেন যোগাযোগ সহজ হওয়ায় অনেকেই সরাসরি কার চালিয়ে প্যারিসে আসেন না জ্বালানি খরচ সাশ্রয়ের জন্য। 

কিন্তু ফ্রান্সের অনন্যা রেজিয়গুলো ইল্‌-দ্য-ফ্রঁস এর মত নয়।আয়তনে পেই দ্য লা লোয়ার রেজিয় ইল্‌-দ্য-ফ্রঁস রেজিয় থেকে প্রায় তিনগুন বড় হলেও জনসংখ্যা ইল্‌-দ্য-ফ্রঁস রেজিয়’র অর্ধেকের কম।এই অঞ্চলেও রয়েছে আঞ্চলিক ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থা কিন্তু ইল্‌-দ্য-ফ্রঁস অঞ্চলের মত সহজলভ্য নয়।দিনের মধ্যে দুই থেকে তিনটি ট্রেন এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলের মধ্যে যাতায়াত করে।যার কারণে ট্রেনে এই অঞ্চলের মধ্যে কোথাও যেতে হলে সতর্কতার সঙ্গে ট্রেনের সময়সূচী অনুসরণ করে যাতায়াত করতে হয়। একটা ট্রেন মিস করলে পরবর্তী ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর পর ঘণ্টা।এই অঞ্চলের স্বল্প জনবসতি মূলত ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থাকে কঠিন করেছে।কারণ,ঘণ্টায় কয়েকটি ট্রেন সার্ভিস চালু রাখলে দেখা যাবে কোন কোন ট্রিপ হয়তো যাত্রীহীন ভাবেই সম্পন্ন হবে।এতে ট্রেন কোম্পানি কখনো এই অঞ্চলে লাভের মুখ দেখবে না। এ কারণেই এই অঞ্চলের ট্রেন সার্ভিস ইল্‌-দ্য-ফ্রঁস রেজিয়’র মত সহজলভ্য নয়। এই প্রতিবন্ধকতার কারণে এই অঞ্চলের মানুষ ইচ্ছে করলেই দিনের যে কোন সময় অতি প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে ট্রেনে চড়ে এক এলাকা থেকে দূরবর্তী অন্য এলাকাতে যেতে পারে না। এজন্য এই অঞ্চলের মানুষের এক জেলা থেকে অন্য জেলা শহরে যাওয়ার প্রধান মাধ্যম ব্যক্তিগত মটরগাড়ি।এছাড়া রয়েছে ভাড়ায় চালিত কার সার্ভিস।ব্যক্তিগত কার না থাকলে কার ভাড়া করে চালানো যায়। তবে এখানকার অধিকাংশ মানুষেরই প্রাইভেট কার রয়েছে।আমাদের দেশের গ্রাম অঞ্চলের অনেক পরিবারে যেমন প্রায় প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক সদস্যের যোগাযোগের জন্য বাইসাইকেল  থাকে, এখানেও তেমন প্রতিটি পরিবারে প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক সদস্যের প্রাইভেট কার রয়েছে। সবাই মটর যান চালাতে পারে। এসব অঞ্চলের মানুষের মটর গাড়ী চালানো শেখার জন্য ফরাসি সরকার নানা ভাবে আর্থিক সহায়তাও করে থাকে।প্রাইভেট কার নির্ভর ফ্রান্সের এমন অঞ্চলগুলোতে ব্লাব্লাকার সার্ভিস খুব জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য।ট্রেন সার্ভিস সহজলভ্য না হলেও কোথাও যেতে তেমন সমস্যার  সম্মুখীন হতে হয় না। কারণ,কোথাও যাওয়ার জন্য মোবাইলের  ব্লাব্লাকার  অ্যাপে অনুসন্ধান করলে  সহজেই স্বল্প মূল্যের কার সার্ভিস পাওয়া যায়। 

এই সার্ভিসের আর একটি বিষয় আমার খুব ভালো লেগেছে। একজন পুরুষ কিংবা মহিলা কার চালক অচেনা অজানা যাত্রীকে নিয়ে দূরের পথে যাত্রা করে ভয়হীন নিঃসংকোচে। আবার একজন পুরুষ কিংবা মহিলা  যাত্রীও অচেনা অজানা একজন মানুষের ব্যক্তিগত গাড়িতে দিন রাত্রির যে কোন সময় যাত্রা করে নির্ভয়ে। উভয়ই একে অপরকে এমন ভাবে বিশ্বাস করে যে কারো দ্বারা কারো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু আমাদের দক্ষিণ এশিয়ায় দেশগুলোতে কোন মেয়ে পাবলিক বাসে একা অবস্থান করলে বাসের ড্রাইভার ও হেল্পার দ্বারা ধর্ষণের মত নির্মমতার স্বীকার হয়। ধর্ষণের পর হত্যা করে রাস্তার ধারে ফেলে দেবার ঘটনাও ঘটে অহরহ। ব্লাব্লাকার সার্ভিসের জনপ্রিয়তার মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের নৈতিকতাবোধ ও রাষ্ট্রীয় আইন শৃঙ্খলা অবস্থা কেমন তা সহজেই অনুমান করা যায়, এছাড়া আমাদের অঞ্চলের সঙ্গে এই অঞ্চলের সামগ্রিক মানুষের মানবিকতাবোধ ও রাষ্ট্রীয় আইন শৃঙ্খলার অবস্থার ব্যবধান কোন স্তরে তার একটি স্বচ্ছ ধারণা করা যায়।    

  

বিস্তীর্ণ মাঠের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা প্রশস্ত মহাসড়ক পাড়ি দিয়ে আমরা চল্লিশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম ছা নাজায়ার শহরে।শহরে পৌঁছেই একটু বিস্মিত হলাম।শহরের রাস্তার দুই ধার দিয়ে সারি সারি আধুনিক নক্সার মাঝারি উচ্চতার দালান দাঁড়িয়ে আছে।শপিং মল, রেস্টুরেন্ট, কাফে বারগুলোর ঝাঁপ বন্ধ।রাস্তার মধ্যে মটর যানের হুড়োহুড়ি নেই।আয়েশি ঢংয়ে হেঁটে চলা হঠাৎ দুই একজন পথচারীর দেখা মিলল।যতগুলো বিল্ডিং রয়েছে ততোজন মানুষ রয়েছে কিনা এই শহরে সন্দেহ হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিল, কোন যুদ্ধাঞ্চলে এসে পৌঁছেছি।প্রাণ ভয়ে এই অঞ্চলের সমস্ত মানুষ বাস্তুভিটা ত্যাগ করে অন্যত্র পালিয়েছে। 


আমরা যাবো সমুদ্র সৈকতে কিন্তু আমাদের ব্লাব্লাকারের চুক্তি অনুযায়ী যেখানে নামিয়ে দেয়ার কথা সেখান থেকে সৈকত বেশ দূরত্বে। আমাদের সঙ্গে ছোট্ট শিশু এবং নতুন শহরের পাবলিক বাস স্টেশন খুঁজে বের করার জটিলতার কথা চিন্তা করে কার চালক অনুগ্রহ করে আমাদেরকে নামিয়ে দিলেন ফ্র দো ম্যার (front de mer) সৈকতে।সৈকতের কোল ঘেঁষে প্রশস্ত রাস্তা বয়ে গেছে ।মানুষের তেমন ভীর নেই। রৌদ্রোজ্জ্বল দিন, আটলান্টিকের জল ছোঁয়া সুশীতল শান্ত বাতাস গায়ে লাগিয়ে কেউ হেঁটে বেড়াচ্ছে, কেউ সাইকেল চালাচ্ছে, রাস্তার ধার দিয়ে বসানো বেঞ্চে বসে বৃদ্ধরা গল্প করে সময় কাটাচ্ছে।সাধারণত পর্যটন মৌসুমে ফ্রান্সের সমুদ্র সৈকতগুলোতে মানুষের ভিড় থাকে কিন্তু এখানে এসে তার বিপরীত চিত্র দেখা মিলল। সমুদ্রের তীর ছোঁয়া বিস্তীর্ণ বেলা ভূমি দেখে মিশেল অস্থির হয়ে উঠল বালু দিয়ে খেলার জন্য।খুশীতে রাস্তা থেকে নেমে চলে গেলো বালিয়াড়ির বুকে। সমুদ্রে যাচ্ছি শুনে সে বালু দিয়ে খেলার খেলনা সামগ্রী সঙ্গে  নিয়ে এসেছে। কিছুক্ষণ অবস্থান করার পর বুঝলাম কেন এই সৈকত পর্যটক শূন্য।সৈকতের একটি নোটিশ বোর্ডে বড় করে একটি ঘোষণাপত্র লাগানো রয়েছে, সেখানে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করা হয়েছে যে বর্তমানে এই সৈকতে সর্ব সাধারণের জন্য গোসল করা নিষেধ।সৈকতের চিত্র দেখে মনে হল দীর্ঘদিন ধরেই সমুদ্র তীরের জলের সঙ্গে মানুষের সংস্পর্শ নেই। এই সৈকতের তীরে আঁচড়ে পরা নোনা জলে পা ভিজিয়ে কেউ হেঁটে বেড়ায় না অনেক দিন।তবে বিশাল বালিয়াড়ির মাঝে তৈরি করা হয়েছে শিশুদের জন্য বেশ কয়েকটি খেলার রাইড।সেই রাইডগুলোতে শিশুদের ভিড় জমে রয়েছে।মিশেল অপেক্ষায় থেকে সুযোগ বুঝে দোলনা রাইড দখল করে ইচ্ছে মত খেলায় মেতে উঠলো।ও আপন মনে খেলছে দেখে আমরা দুজন একটু দূরে গিয়ে বালুর উপর বসলাম।সঙ্গে যে জল খাবার এনেছিলাম সেগুলো খেয়ে ক্ষুধার উদ্বেগ কমে গেছে।ঘড়ির কাটায় তিনতে ত্রিশ মিনিট, মনে হল দুপুরের মধ্যাহ্ন ভোজের পর্বটা সেরে নেয়া দরকার। সুমিকে বালিয়াড়িতে রেখে আমি মিশেলকে আনতে দোলনার কাছে গেলাম।এসে দেখি মিশেল এখানে নেই,মুহূর্তেই কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে গেলো।ওকে এখানে রেখে কিছু সময় আমাদের গল্প করে কেটেছে,তবে মাঝে মাঝে লক্ষ্য রেখে দেখেছি ও এখানেই খেলা করছিলো।অনেক শিশুরা এখনো খেলাধুলা করছে।ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলাম মিশেল এখানে নেই। আশেপাশেও ওর দেখা মিলল না।সুমিকে ফোন করে জানাতেই ও ছুটে এলো। ওকে এখানে রেখে আমি অন্য রাইডগুলোতে খোঁজ করার জন্য ছুটে গেলাম। এখানে বাচ্চা চুরি হওয়ার মত অঘটন সাধারণত হয়না।তবুও উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় মনটা অস্থির হয়ে উঠলো।অনেক বড় সৈকতের বালিয়াড়ির মধ্যে বেশ দূরত্বে দূরত্বে এক একটি খেলার রাইড। আশেপাশের রাইডে ওকে না পেয়ে ছুটে গেলাম অনেক দূরের একটি রাইডে।দেখি নির্ভয়ে এখানে একটি রাইড দখল করে নির্ভয়ে খেলছে।তার ভাব দেখে মনে হচ্ছে না যে অচেনা জায়গায় বাবা মায়ের সঙ্গে ঘুরতে এসেছে।স্থানীয় প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মত নিঃসংকোচে খেলায় মেতে উঠেছে।ওকে দেখে আগেই ওর কাছে গেলাম না। সুমিকে ফোনে জানিয়ে দিলাম মিশেলকে পাওয়া গেছে, চিন্তা না করে ওখানেই আমাদের জন্য অপেক্ষা করতে বললাম।একটু দূর থেকে ওকে লক্ষ্য করে দাঁড়িয়ে রইলাম।বেশ কিছুক্ষণ পর ওর কাছে গেলাম।জিজ্ঞেস করলাম তুমি এতো দূরে আমাদেরকে না বলে চলে এসেছ কেন বাবা? সে তার মত করে ফরাসি ভাষায় যা বলল, তা হল ওখানের সব খেলা শেষ তাই এখানে চলে এসেছি।পরে ওকে নিয়ে আসার পথে বুঝিয়ে বললাম অচেনা জায়গায় আমাদের না জানিয়ে কোথাও গেলে বাচ্চাধরারা তোমাকে ধরে নিয়ে যেতে পারে। সে কথা দিলো সে আর আমাদের না বলে কোথায়ও যাবে না । 



                       















সৈকতের পাশে সবগুলো ফরাসি রেস্টুরেন্ট তাই মা মেয়েকে সৈকতের একটি বেঞ্চে বসিয়ে রেখে আমি চলে গেলাম তুর্কি গ্রেগ স্যান্ডুইচের একটি রেস্টুরেন্ট খুঁজে বের করতে।হাঁটতে হাঁটতে জনমানবের কোলাহল শূন্য শহরের ভিতরে ঢুকে অলিগলিতে রেস্তোরাঁ খুঁজতে লাগলাম।দু চারটে যা চোখে পড়লো তাও ফরাসি রেস্তোরাঁ।শহরের আবাসিক এলাকার মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এসে দাঁড়ালাম একটি চৌরাস্তার মোড়ে, এখান থেকে একটু দূরে ছোট বড় শত শত জাহাজ নোঙ্গর করা।আগ্রহভরে একটি রাস্তা ধরে জাহাজগুলোর  দিকে এগুতে লাগলাম।রাস্তার পাশ দিয়ে অনেকগুলো দোকানপাট কিন্তু দোকানগুলোর ঝাপ লাগানো। বুঝতে পারলাম রোববার ছুটির দিনের কারণে দোকানগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে।একটা তুর্কি রেস্টুরেন্ট পাওয়া গেলো কিন্তু বন্ধ প্রবেশ দরজা উপর টাঙানো একটি নোটিশে লেখা রয়েছে রোববারে রেস্টুরেন্টটি সারাদিন বন্ধ থাকে।আরও কিছু সময় চারপাশ ঘুরে হতাশ হয়ে ফিরে এলাম।মধ্যাহ্ন ভোজ নিয়ে একটু সমস্যায় পড়তে হল।সৈকতের সঙ্গে একটি বড়সড় ফরাসি ক্রেপরী পেলাম।রেস্তোরাটির ভেতরে এবং বাইরে ক্ষুধার্ত পর্যটক ও স্থানীয়দের ভিড় জমে রয়েছে।উপায়ন্ত না পেয়ে মনে হল মধ্যাহ্ন ভোজ পর্বটা এখানেই সেরে নেয়া যায়। ফরাসি খাবারের মধ্যে এই খাবারটি আমার প্রিয় তবে মধ্যাহ্ন ভোজের জন্য যথাযত নয়। জলখাবার হিসেবে খুব ভালো।ফরাসিরা জলখাবার হিসেবেই এই জনপ্রিয় খাবারটি খেয়ে থাকে।সাধারণত প্রায় প্রতিটি ফরাসি বড় রেস্টুরেন্টের রাস্তা সংলগ্ন এক কোণে ক্রেপ বিক্রি করা হয়।এক থেকে দুই ইউরোর মধ্যে সহজলভ্য এই খাবারটি ফরাসিরা ফুটপাতের উপর দাঁড়িয়ে অর্ডার দিয়ে তৈরি করায়। পরে গরম গরম হাঁটতে হাঁটতে খেতে থাকে।তবে ফ্রান্সের বিভিন্ন অঞ্চলে ঐতিহ্যবাহী ক্রেপরী রয়েছে।এই রেস্তোরাগুলোতে শুধু বিভিন্ন স্বাদ ও বৈচিত্র্যের ক্রেপ বিক্রি করা হয়।এই বিশেষ রেস্তোরাগুলোকে বলা হয় ক্রেপরী « Crêperies »। প্যারিসে অনেক বার ক্রেপ খেয়েছি, খাবারটি যতবার খেয়েছি ততবার মনে হয়েছে বাংলাদেশের চাপড়ির কথা।কারণ আমাদের দেশে চাপড়ি যেভাবে বানানো হয় ক্রেপ ঠিক সেভাবেই বানানো হয় তবে ক্রেপ খুব পাতলা করে বানানো হয়,এছাড়া ক্রেপের গোলানো ময়দার সঙ্গে চিনি মাখন,ডিম এবং আরও কিছু উপাদান যুক্ত করা হয়।বানানো ক্রেপের সঙ্গে পরে রুচি অনুযায়ী কেউ চকলেট,পনির,চিনি যুক্ত করে খায়।

সুমি এবং মিশেল পূর্বে কখনো ক্রেপ খাইনি,ওদেরকে ক্রেপ সম্পর্কে ধারনা দিয়ে ক্রেপরীতে নিয়ে গেলাম।রেস্তোরা পরিচারিকা যখন আমাদের কাছে ক্রেপের চার্ট নিয়ে আসলো তখন চার্ট দেখে ক্রেপ সম্পর্কে আমার যে ধারনা ছিল তা সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়েগেলো।রেস্তোরাটিতে প্রায় পনেরো ধরনের ভিন্ন সাধের ভিন্ন দামের ক্রেপ পাওয়া যায়। যেহেতু এটি ভারী খাবার নয় তাই আমার পরিচিত সাধের কয়েকটি ক্রেপের সঙ্গে আরও কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের ক্রেপ অর্ডার করলাম।ভাবলাম যদি ভালো লাগে তবে পরে আরও অর্ডার করা যাবে।তাছাড়া ওরা দুজন এই খাবারের সাধের সঙ্গে পরিচিত নয়। প্রথম অর্ডারের প্রত্যেক প্রকারের ক্রেপ খেয়ে আমরা সবাই অভিভূত হয়ে গেলাম।প্যারিসে ক্রেপের সঙ্গে মনে হল এখানকার স্বাদের বিশেষ পার্থক্য রয়েছে।আর এটাই একই খাবারের অঞ্চল ভিত্তিক বিশেষ বিশেষত্ব।আমরা আরও দুইবার অর্ডার করলাম।ক্রেপের পাতলা চাপড়ির মধ্যে ডিম,ফল, ঝাল সবজি বা মাংস  যুক্ত করে বানানো হলে বলা হয় গালেত « galette »।আমরা গালেতের সাধও আস্বাদন করলাম তৃপ্তি সহকারে।এতোগুলো ক্রেপ আর গালেত খাওয়ার পরেও মনে হল ক্ষুধা ভাব রয়েই গেছে।আসলে ক্রেপ ভারী খাবারের ক্ষুধা মেটাতে অক্ষম। মিশেলতো খাবারটির বিশেষ ভক্ত হয়ে গেল। ওর জন্য আরও কয়েকটি ক্রেপ অর্ডার করলাম সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য যাতে ফেরার পথে খেতে পারে।  



সৈকতের তীর ঘেঁষা এই ক্রেপরীর তেরাসে বসে গল্প করে বেশ কিছু আয়েশি সময় কাটল আমাদের।সূর্যের তেজ কমে এসেছে।শীতল বাতাস শরীরে শিরশির শিহরণ দিয়ে যাচ্ছে।রেস্তোরাঁর সামনে দিয়ে একটি সরু পথ চলে গেছে সমুদ্রের দিকে।রাস্তার শেষ সীমানায় মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে সমুদ্রের বাতিঘর।ক্রেপরীর তেরাস থেকে বিদায় নিয়ে শরীরে হালকা শীতের কাপড় জড়িয়ে আমরা চললাম বাতিঘরের দিকে।বাতিঘরটি তীর থেকে বেশ দূরে সমুদ্রের মধ্যে অবস্থিত।বাতিঘরে দাঁড়িয়ে মনে হল আমরা মাঝ সমুদ্রের কোন জাহাজের অবস্থান করছে।সামনে সমুদ্রের নীল জলরাশি।এই বিশাল জলরাশির সামনে দাঁড়িয়ে অন্যরকম এক অনুভূতিতে মনটা ভরে উঠলো। সমুদ্রের ধূধূ জলরাশির সামনে দাঁড়ালে নিজেকে মাপা যায়। মনে হয় এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মাঝে কি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এক অস্তিত্ব আমি।যা জনারণ্যের মধ্যে এই অনুভূতি সহজেই জাগ্রত হয় না।জগতটা যে কি বৈচিত্র্যময় তা সমুদ্রের সামনে দাঁড়ালে সবারই হয়তো একটু ভিন্নরকম ভাবে অনুভূত হয়।বাতিঘরটি তীর থেকে এতো দূরে অবস্থিত যে এখানে দাঁড়িয়ে ছা-নাজায়ার শহরের অবয়ব অনুমান করা যায়।সমুদ্র তীরবর্তী সাজানো গোছানো বাড়ী, পুরনো প্রার্থনা ঘর,বন্দর এছাড়া দূরবর্তী প্রমদতরির ভেসে চলা,ছোট ছোট মেরিন জাহাজের ছুটে চলা ইত্যাদি।প্রথম বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত « স্মৃতিসৌধ আমেরিকান » (Monument Américain)বাতিঘর থেকে একটু দূরে অবস্থিত। সমুদ্র তীরের  একটি সুউচ্চ স্তম্ভের উপর ঈগলের পিঠে একজন সৈনিক তরবারি হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে।প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে ছা নাজায়ার বন্দরে আমেরিকান সৈনিকদের প্রথম অবতরেনের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য এই স্মৃতি স্তম্ভটি ১৯২৭ সালের স্থাপন করা হয়।এছাড়া স্মৃতিস্তম্ভটি জার্মানদের বিরুদ্ধে  আমেরিকানদের বিজয়গাথার প্রতীক হিসেবও সাক্ষী দেয়। 






বাতিঘর থেকে চলে আসার পর বিকেলের শান্ত সৈকতের বসে আকাশে গাংচিলের ওরাউড়ি আর আশেপাশে হেঁটে হেঁটে বেশ কিছু সময় পার হল।আমরা নন্তে ফিরবো আবারও ব্লাব্লা কারে। আমাদের কার ছা-নাজায়ার থেকে ছেড়ে যাওয়ার সময় রাত আটটা পঞ্চাশ মিনিট। আমাদের হাতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় রয়েছে।আমরা সৈকত ছেড়ে চলে এলাম আবাসিক এলাকার দিকে।আবাসিক এলাকার কোল ঘেঁষে স্থাপিত বন্দর।বন্দরে নোঙ্গর করা শত শত জাহাজ, জাহাজ মেরামত কারখানা।বন্দরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা বড় রাস্তার দুই ধার দিয়ে গড়ে উঠেছে অফিস,সুপার মার্কেট,সিনেমা হল,নানা বিনোদন কেন্দ্র।কিন্তু এলাকাটিতে প্রায় জনমানবহীন নিস্তব্ধতা বিরাজমান।বড় রাস্তার পাশ দিয়ে বয়ে চলা একটি সরু রাস্তা ধরে আমরা হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম রাস্তাটির শেষ মাথায়। রাস্তাটি এসে শেষ হয়েছে সমুদ্রের জল ছোঁয়া একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ এলাকার মত জায়গায়।কোন মানুষের আনাগোনা নেই আমরা তিনজন ছাড়া।সমুদ্রের জলের কিনারে বসে মনে হল না সমুদ্র পারে বসে আছি কারণ সামনের জলরাশির তাকিয়ে অনুভূত হচ্ছিল যে আমরা হয়তো আমাদের দেশের কোন হাওর বা বিলের ধারে বসে আছি।কারণ বিস্তীর্ণ শান্ত জলধারার সুদূরে পাড়াগাঁয়ের মত একটি ধুধু রেখা দেখা যাচ্ছিল।অঞ্চলটি মূলত লোয়ার নদী ও আটলান্টিকের  সংযোগ মোহনা। 

 অপর প্রান্তের ছা ব্রেভা লে পা (saint-Brevin les pins) শহর আর এ প্রান্তের ছা নাজায়ার শহরের সংযোগ সৃষ্টিকারী দৃষ্টিনন্দন  ছা-নাজায়ার সেতু লোয়ার নদীর মোহনার জল থেকে থেকে সুউচ্চ দিয়ে বয়ে ধনুকের মত দাঁড়িয়ের রয়েছে।যেটি আমরা এখানে বসেই দেখলাম।প্রায় সারে তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুটি ফ্রান্সের সর্ববৃহৎ সেতু।   





 ছা-নাজায়ার পশ্চিম ফ্রান্সের একটি আটলান্টিক সমুদ্র উপকূলীয় ছোট্টও শহর।কিন্তু নানা স্থাপনা,বন্দর ও বিভিন্ন কারণে শহরটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।শহরটি ফ্রান্সের পেই দো লা লোয়া(Pays de la Loire) রেজিয়’র লোয়া আটলান্টিক (Loir-Atlantique)দেপারত্তম’র একটি পৌর অঞ্চল।প্রায় সত্তর হাজার মানুষের বসতি এই শহরটিতে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের বহু স্মৃতিচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে এই শহরটি।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রাসের যে শহরগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার মধ্যে এই ছোট্ট শহরটি অন্যতম।  

১৯১৬ সালের সালে ১৭ মে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ও বিলাসবহুল প্রমোদ তরী ‘হারমোনি অব দ্য সিজ’প্রায়  তিন বছরের নির্মাণযজ্ঞ শেষের পর হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু করে এই ছা-নাজায়ার বন্দর থেকে। ছা-নাজায়ার শিপইয়ার্ডে মার্কিন জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই জাহাজের নির্মাণ কাজ শুরু করে।১.১ বিলিয়ন ডলার খরচের এই জাহাজটির দৈর্ঘ্য ৩৬২ মিটার যা আইফেল টাওয়ারের চেয়ে ৫০ মিটার বেশী লম্বা।ষোল তলাবিশিষ্ট জাহাজটি ছয় হাজার যাত্রী এবং দুই হাজার নাবিক ধারণ করতে সক্ষম।   হারমোনি অব দ্য সিজ এর মত এমন অনেকগুলো প্রমোদ তরী এই বন্দর থেকে আটলান্টিকের বুকে ভ্রমণ পিয়াসী যাত্রীদের নিয়ে প্রতিনিয়ত যাত্রা করে। 

আমরা একঘণ্টা হাতে রেখে বন্দর এলাকা থেকে আমাদের ফেরার প্রস্তুতি নিলাম। 31Boulevard de la Libération,  ব্লাব্লা কারের দেয়া এই ঠিকানায় আমাদের উপস্থিত থাকতে হবে। গুগল  ম্যাপে অনুসন্ধান করে দেখলাম বন্দর এলাকা থেকে আমাদের গন্তব্যের দূরত্ব হেঁটে ত্রিশ মিনিটের পথ।যেহেতু সময় রয়েছে তাই পাবলিক বাসের জন্য অপেক্ষা না করে সিদ্ধান্ত নিলাম হেঁটে শহর দেখতে গন্তব্যে পৌঁছুবো।গুগল ম্যাপ অনুসরণ করে বন্দরের কোল ঘেঁষে বয়ে চলা রাস্তা ধরে একটু এগুতেই মিশেল আবিষ্কার করলো একটি মেলা। রাস্তার থেকে একটু দূরে শিশুদের বিভিন্ন খেলার অস্থায়ী ইভেন্ট দিয়ে সাজানো মেলাটি।সময়ের স্বল্পতা কিন্তু মিশেল দাবী তুলল সে মেলায় যাবে। ওর দাবী না মেটালে মন খারাপ করবে তাই খুব অল্প সময় অবস্থানের শর্তে ওকে নিয়ে মেলায় গেলাম। মেলা কিন্তু কোন ভিড় নেই অল্প কিছু শিশু কিশোর খেলাধুলা করছে। কাউন্টার থেকে একটি টিকেট নিয়ে মিশেলকে খেলার রাইডগুলোর মধ্যে প্রবেশ করিয়ে আমরা বাইরে বসে রইলাম। ইচ্ছে মত এক রাইড থেকে অন্য রাইডে ছুটে ছুটে খেলায় মেতে উঠলো মিশেল।কিছুক্ষণ পর ওকে বাইরে নিয়ে আসলাম। বাইরে এসে তার প্রিয় খেলা কানার পেশ Canard Pêche খেলে একটি প্ল্যাস্টিকের ধনুক জিতে খুব খুশী কিন্তু আমাকে তীর মারতে গিয়ে ধনুকের সুতো ছিঁড়ে যাওয়ায় কান্না শুরু করে দিলো।শান্ত করার জন্য বাসায় গিয়ে ধনুকের সুতো লাগিয়ে দেবার আশ্বাস দিয়ে ওকে নিয়ে আবার রওনা হলাম। আমরা হাঁটতে হাঁটতে শহর থেকে আবাসিক এলাকায় চলে এলাম।রাস্তার পাশ দিয়ে কিছু বাড়ি ঘর আভিজাত্যে ও জৌলুসে মোড়ানো।এ ধরনের বাড়িগুলোকে ফরাসি ভাষায় মেজ(maison) বা পাভিয়(pavillon) বলে থাকে।বাড়িগুলো সাধারণত দুইতলা বিশিষ্ট হয়ে থাকে। নিচ তলায় রান্না ,অবকাশ ও খাওয়ার ঘর আর উপর তলায় ঘুমানোর ঘর।মাটির নিচে আর একতলা করা হয় নানা জিনিসপত্র সংরক্ষণের জন্য।সামনে ফুল ও সবজির বাগান। অধিকাংশ বাড়ী এই ধরনের।বাইরে থেকে দেখতে অনেকটা আমাদের দেশের গ্রাম অঞ্চলের সৌখিন মানুষদের কাঠ অথবা টিনের তৈরি দোতলা বাড়ীর মত কিন্তু পশ্চিমা নিজস্ব স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের।ধনীদের পাভিয় বাড়ীগুলো অনেক বেশী বৈচিত্র্যতায় ভরা থাকে।এই পৃথিবীতে মানুষ যে কত আয়েশি জীবন যাপন করতে পারে তা দেখতে হলে যেতে হবে  পশ্চিমা ধনী দেশগুলোর গ্রাম অঞ্চলে।আমরা যখন কদিনের জন্য কতে (Cean) ছিলাম তখন একদিন বাসে করে নরমান্দির কয়েকটি সৈকত দেখতে গিয়েছিলাম।বিকেলের দিকে সৈকত থেকে বাসে করে হোটেলে ফেরার পথে নরমান্দি অঞ্চলের গ্রামীণ জীবনের প্রতিচ্ছবি অনুধাবনের সুযোগ হয়েছিল।আমাদের বাস গ্রামের আবাসিক এলাকার মধ্য দিয়ে চলছিল।সুনসান নীরব অঞ্চল।কোথাও একটু ঘনবসতি আবার বিস্তীর্ণ ফসলি মাঠ। ধুধু মাঠের মধ্যে কোথাও কোথাও কিছু বড় বড় গাছ দাঁড়িয়ে রয়েছে।কোথাও অনেকটা জনবিচ্ছিন দূরত্বে রাস্তার পাশে দিয়ে এক একটি বাড়ি। বাড়ীর সামনে ধুধু প্রান্তর। দেখে বোঝা যাচ্ছিল বাড়িগুলো অনেক জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত।মানুষ আবাসস্থল তৈরি করে বসবাসের জন্য কিন্তু সেই বসতিতে মানুষের আনাগোনা না থাকলে মরুভূমির মত ধু ধু মনে হয়।এই বাড়ীগুলো দেখে আমার তেমনি মনে হয়েছিলো। বাড়ীগুলো দেয়ালের কানায় কানায় আভিজাত্যের আভা, সামনে ফুলের বাগান ,বিস্তীর্ণ সবুজ ফসলের মাঠে ঢেউ তুলে স্নিগ্ধ বাতাস ছুটে যাচ্ছে বাড়ীর মানুষগুলোকে প্রশান্তি দিতে, দীর্ঘাকার বৃক্ষরাজী ছায়া শীতল করে রেখেছে বাড়ীগুলোর চারিধার। এমন বাড়ীর সামনে কোন শিশুকিশোরের হৈচৈ নেই। নেই কোন মানুষের কোলাহল। এক ভূতুড়ে আবহ সৃষ্টি হয়ে আছে। 


আমাদের মধ্যে যারা ধর্ম বিশ্বাসী,পরবর্তী জীবনে বিশ্বাসী তারা বেহেশত ও দোজখের দুঃখ কষ্ট বিশ্বাস করে থাকি। যারা দুনিয়াতে ভালো কাজ করবে, ধর্মীয় বিধিবিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করবে তারা  পরবর্তী জীবনে বেহেশতে বসবাস করবে। বেহেশতের জীবনের বর্ণনার সারমর্ম হচ্ছে, এখানে সুন্দর বাড়ী থাকবে, কলকল ধ্বনিতে পানির ধারা প্রবাহিত হবে, পুরুষ বেহেশতবাসীগনের আশেপাশে সুন্দর রমণীরা ঘোরাফেরা করবে, যা খেতে ইচ্ছে করবে ইচ্ছে জাগা মাত্র সেই খাবার সামনে চলে আসবে। এই সুখ প্রাপ্তির আশায় তৃতীয় বিশ্বের ধর্ম বিশ্বাসী মানুষ সারাজীবন দুঃখ কষ্টের সঙ্গে লড়াই করে ধর্মকর্ম করে।সারা জীবনের জীবনের সংগ্রামেও পার্থিব সুখের সন্ধান মেলে না তাদের জীবনে।তাদের ধারণায় পৃথিবী মানেই কষ্টের।পৃথিবী মানেই জীবন বাঁচিয়ে রাখার সংগ্রাম।পরপারেই রয়েছে আসল সুখের সন্ধান। কিন্তু পৃথিবীতেই যে এক শ্রেণীর মানুষ বেহেশতের বর্ণনার মতই জীবন যাপন করে তা তারা জানেই না। এই শ্রেণীর মানুষেরা স্বর্ণ রৌপ্য ও পাথরের উপর খচিত শিল্পকর্মের গড়া বাড়ীতে বসবাস করে,তাদের বাড়ীতে সামনে দিয়ে কৃত্রিম ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হয়,ফোটা ফুলের উপর দিয়ে মৌমাছি ঘুরে বেড়ায়।খানসামারা তাদের  ইচ্ছে অনুযায়ী টেবিলে হরেক রকমের খাবার পরিবেশ করে দাঁড়িয়ে থাকে।টাকার বিনিময়ে তারা দেশী বিদেশী সুন্দরী নারীর শরীর ভোগ করে সুস্বাদু খাবারের মতই।এই সুখ উপভোগের জন্য তাদের একের পর এক ডিগ্রী অর্জনের জন্য পরিশ্রম করতে হয় না।চাকুরীর জন্য হন্য হয়ে দৌড়াতে হয় না। এই পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষেরই যে তিন বেলার আহার যোগাতে সারাদিন কায়িক ও মানসিক পরিশ্রম করতে হয়, তা তারা জানেই না। মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিমা দেশের অনেক মানুষের জীবন যাপন এমন। প্রাকৃতিক ও উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জিত সম্পদের স্তূপের উপর অবস্থান করায় তারা পৃথিবীর মূল বাস্তবতার বাইরেই থেকে যায়।    

নরমান্দির এই অভিজাত বাড়ীগুলো দেখে এমনি মনে হয়েছিলো। এমন বাড়ীতে সাধারণত দুই তিনজনের বেশী মানুষ বসবাস করে না। কোন কোন বাড়ীতে কোন বয়োবৃদ্ধ মানুষ একা জীবন যাপন করে। ইউরোপে মাঝে মাঝেই  এমনও খবর পাওয়া যায় যে, কোন নির্জন বাড়ীতে বয়স্ক মানুষের পচে যাওয়া লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।পশ্চিমা দেশে শেষ বয়সের অধিকাংশ মানুষ একা জীবন যাপন করে থাকে,সঙ্গী হিসেবে অতি আদর যত্নে কুকুর বিড়াল লালন পালন করে থাকে।মাঝে মাঝে দেখা যায় কোন মানুষ রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড বা সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে দীর্ঘ দিন ধরে অনুপস্থিত।অনেক সময় প্রশাসনিক লোক বা কোন নিকট প্রতিবেশী উদ্বিগ্ন হয়ে ঐ ব্যক্তির খবর জানতে ঐ ব্যক্তির বাড়ীতে হাজির হয়েছে, কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে তার মৃত পচা লাশের সন্ধান পেয়েছে।


একই পৃথিবীর মানুষ আমরা কিন্তু জীবন যাপনে এক আশ্চর্য বৈচিত্র্যতা বিরাজমান এই ধরণীর বুকে। তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশের মানুষের মাথার উপর আচ্ছাদন নেই। অনেকই এক ঘরের মধ্যে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঠাসাঠাসি করে বসবাস করে।অনেকে মাথার উপর একটু ছাউনি তৈরির আশায় দিনরাত  অমানবিক পরিশ্রম করে। অথচ পশ্চিমা দেশে বড় বড় বাড়ি আছে কিন্তু সেই সব বাড়িতে থাকার মানুষ নেই, ভূমি আছে কিন্তু জনমানব শূন্য ,যে পরিমাণ খাদ্যের উৎপাদন রয়েছে তা নিঃশেষ করার মুখ নেই,অনেক দেশে উদ্বৃত্ত খাবার সমুদ্রে ফেলে দেয়া হয়।অথচ এই পৃথিবীর একাংশ মানুষ অন্য মানুষের খাওয়া উচ্ছিষ্ট খাবার ডাস্টবিন থেকে সংগ্রহ করে ক্ষুধা নিবারণ করে থাকে। 


আমরা অধিকাংশ মানুষ ইহজগতে কষ্ট ও বঞ্চনার জীবন অতিবাহিত করে পরকালের সুখী সমৃদ্ধ জীবন পাওয়ার আশায় মৃত্যু অবধি অপেক্ষা করি।অথচ স্রস্টার সৃষ্ট পৃথিবীতে যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে সেই সম্পদের যদি প্রতিটি মানুষ ও প্রাণীর মধ্যে একটা সুষম বণ্টন ব্যবস্থা থাকতো তাহলে এই পৃথিবীতে একদিকে জৌলুশের ফোয়ারা অন্যদিকে জীবন টিকিয়ে রাখার ঘাম ঝরানোর সংগ্রাম দেখতে হতো না।এই পৃথিবীটা হতো একটি বনভোজনের স্থান। মানুষ এখানে আসবে, হেসে খেলে আনন্দের রেশ নিয়ে আবার চলে যাবে। একটুখানি সুখী জীবনের আশায় তৃতীয় বিশ্বের মানুষ উন্নত দেশে পাড়ি জমাতে জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে পাহাড় পর্বত সমুদ্র পাড়ি দেয়।অথচ, এই পৃথিবীর কোন কিছুই আমাদের নয়।আমরা কিছু সময় অতিবাহিতের জন্য এখানে আসি। এই অবস্থানের সময় ভালো ভাবে অতিবাহিতের জন্য আমাদের নানা উপকরণের প্রয়োজন হয়।সেই উপকরণ পর্যাপ্ত পরিমাণ এই পৃথিবীতেই রয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্র ব্যবস্থা,রাজনীতি,জাতিভেদ,রাষ্ট্রীয় সীমারেখা ও আইন কানুনের বেড়াজালে কেউ এই পৃথিবীর বুকেই বেহেশতের বর্ণনার মত জীবন যাপন করে, কারো সারাটা জীবনই কাটে হাবিয়া দোজখের মত।যদিও এই পদ্ধতিগুলো মানুষ তার শৃঙ্খলিত জীবন যাপনের জন্য তৈরি করেছে আবার এই পদ্ধতিগুলোই মানুষে মানুষের বৈষম্যের অন্যতম প্রধান কারণ। এই পার্থক্যের দায় সম্পূর্ণই মানুষের।স্রষ্টা আমাদের জীবন উপকরণ দিয়েছে অফুরান কিন্তু সেই উপকরণ যদি বাহুবল ও আইনের ফাঁদে ফেলে একাই হাজার মানুষের উপকরণ দখল করে রাখি, তাহলে সুখী সমৃদ্ধ পৃথিবী হবে কি করে?  তাই এই পৃথিবীর কোন অংশের মানুষ কেউ কেউ ভালো আছে, কিন্তু সামগ্রিক পৃথিবীর মানুষ আমরা ভালো নেই।  


 


নির্ধারিত সময়ের পাঁচ মিনিট পূর্বে আমরা চলে এলাম ব্লাব্লা কারের দেয়া নির্ধারিত ঠিকানায়। একটি প্রাইমারী স্কুলের পাশে দাঁড়িয়ে রাস্তার দিকে চেয়ে আমাদের মোটর কারের জন্য অপেক্ষা করছি। একটি কার আমাদের কাছাকাছি এসে থামল। আমাদের কার ভেবে আমি এগিয়ে গেলাম, চালক কারটি রাস্তার পাশে পার্ক করলো এবং কার থেকে বেরিয়ে কোন দিকে না চেয়ে চলে গেলো। বুঝলাম এটি আমাদের কার নয়। এরপর বেশ কয়েকটি কার আমাদের সামনে দিয়ে পার হয়ে চলে গেলো কিন্তু কোনটাই আমাদের দেখে থামল না।নির্ধারিত সময় থেকে দশ মিনিট অতিবাহিত হয়ে রাত নয়টা বেজে গেলো কিন্তু আমাদের কারের দেখা মিলছে না। একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম। সাধারণত নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার কথা নয়, কোন সমস্যা হলে গাড়ির চালক আমাদের ফোন করে জানানোর কথা।বাধ্য হয়ে আমি কার চালকে ফোন দিলাম। চালক ফোন ধরে বলল আমি আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছি, আপনারা কোথায়? আমিও বললাম আমরাও আপনার জন্য বেশ কিছুক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি কিন্তু আমাদের সামনে কোন কার দেখছিনা।আমি আমাদের অপেক্ষার ঠিকানা বললাম এবং জানালাম আমরা স্কুলের পাশে দাঁড়িয়ে আছি।কিন্তু চালক অন্য ঠিকানা বলল এবং সে একটা সুপার মার্কেটের নাম উল্লেখ করে বলল সে ওই মার্কেটের সামনে অপেক্ষা করছে।বুঝলাম উভয়ই একটি ভুল বোঝাবোঝির মধ্যে আছি।চালক আমাদেরকে তার ঠিকানায় যেতে অনুরোধ করলো।চালকে বললাম, আমরাতো ব্লাব্লা কারের আপে আপনার দেয়া ঠিকানায় যথা সময়েই উপস্থিত হয়েছি, এছাড়া এই শহরে আমরা নতুন এবং কোন কিছুই ভালো ভাবে চিনি না।চালক তার ব্লাব্লা কারের একাউন্ট চেক করে জানালো ভুলটা তার হয়েছে, অন্যদিনের বিজ্ঞাপনে সে যে ঠিকানা ব্যবহার করেছিল সেই ঠিকানায় ভুল করে অপেক্ষা করছে। সে আমাদের অপেক্ষা করতে বলল এবং আশ্বস্ত করলো কিছুক্ষণের মধ্যে এসে আমাদেরকে নিয়ে যাবে।মুহূর্তেই এক অজানা আশঙ্কা ভর করে বসল।কোন কারণে যদি এই মুহূর্তে কার মিস হয় তবে মহাবিপদে পড়তে হবে ভেবে।


আমরা যে বছর ক’তে (Cean) গিয়েছিলাম তখন আমাদের হোটেলের অভ্যর্থনাকর্মীর পরামর্শে প্রথম দিন পাবলিক বাসে করে গিয়েছিলাম উইছত্রেম (Ouistreham)সমুদ্র সৈকতে। ক শহর থেকে সৈকতটি একুশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বিশাল বেলাভূমির সৈকত।সৈকত জুড়ে পর্যটকদের ভিড়।বিনোদনের জন্য সৈকতজুড়ে নানা ধরনের খেলাধুলার রাইড, দোকান পাঠ দিয়ে সাজানো।একটি খেলনার দোকান থেকে মিশেল একটি ঘুরি কিনল।সৈকতের প্রবল বাতাসে আমি আর মিশেল ঘুরিটিকে উড়িয়ে দিলাম আকাশে। মিশেলের জীবনে প্রথম ঘুরি উড়ানোর আনন্দ আর আমার ছেলেবেলায় ফিরে যাওয়া।সৈকতে মিশেলের বালু দিয়ে ঘর বানানো, সুমির সমুদ্র তীরে বসে নির্মল বাতাসে উদাসী সময় কাটানো, মিশেল আর আমার নোনা জলে গা ভেজানো ইত্যাদির মধ্য দিয়ে দারুণ সময় কাটল।সূর্যের তাপ কমে যাওয়ার সঙ্গে ভাটার কারণে তীর ছেড়ে সমুদ্রের জলও দূরে চলে যাচ্ছে এমন সময় আমরা সৈকতের বেলাভূমি ছেড়ে চলে এলাম তীরবর্তী আবাসিক এলাকার দিকে।পর্যটন স্থান সেকারণে এলাকা জুড়ে অভিজাত হোটেল রেস্তোরা গড়ে উঠেছে।আমরা হেঁটে হেঁটে এলাকাটি ঘুরে দেখতে লাগলাম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে এখানে,সেটিও পরিদর্শন করা হল।ঘড়ির নিয়মে সন্ধ্যা ছয়টা কিন্তু দুপুরের মতই ঝলমলে আলো ঝিকঝিক করছে কারণ সন্ধ্যার আধার নামবে রাত সারে দশটার দিকে। রেস্তোরার তেরাজগুলোতে পর্যটক ও স্থানীয়দের বৈকালিক আড্ডা জমে উঠেছে।তীরবর্তী এলাকাজুড়ে মানুষের কোলাহল।এমন পরিবেশে আমাদের ইচ্ছে করছে সূর্যাস্তের সুমুদ্র দেখার, কিন্তু তা সম্ভব হবে না আমাদের হোটেল এখান থেকে অনেক দূরে হওয়ার কারণে,এছাড়া পাবলিক বাস পেতে সমস্যা হবে ভেবে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আর একঘণ্টা এখানে অবস্থান করে সন্ধ্যা সাতটার দিকে বাস স্টেশনে চলে যাবো। নিশ্চিন্ত মনে ঘোরাঘুরির পর ভালোলাগার রেশ নিয়ে আমরা সমুদ্রতীর এলাকা ছেড়ে চলে এলাম বাস স্টেশনে।

চারপাশে থমথমে নীরবতা, বাস স্টপেজে কোন অপেক্ষমাণ যাত্রী নেই।রাস্তায় নেই কোন চলমান মোটরযানের ছুটে চলা।ফুটপাতেও দেখা মিললো না বৈকালিক ভ্রমণের কোন জনমানবের হেঁটে চলার পদচিহ্ন।আমরা যখন দিনের মধ্যাহ্নে এই স্টপেজে এসে নেমেছিলাম তখনকার দৃশ্যের সঙ্গে এই মুহূর্তের দৃশ্যপট সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী পরিলক্ষিত হল।তখন মানুষের কোলাহল ছিল, পাশের একটি কোলাহল মুখর  ভ্রাম্যমাণ বাজার থেকে আমরা কিছু জিনিসপত্র কিনলাম। দোকানপাটগুলোতে মানুষের ভিড় ছিল। কাফের বার ও রেস্তোরাঁয় মানুষের আড্ডা ছিলো।আর সন্ধ্যা সারে সাতটার মধ্যে এতো বৈদৃশ্য তা ভাবতে পারছিলাম না।  আমাদের হোটেলে ফেরার এই বাসটিই একমাত্র অবলম্বন। অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি কিন্তু রাস্তার দুই দিক থেকে কোন বাসের আসা বা যাওয়ার দৃশ্য চোখে ধরা পড়লো না।সাধারণত প্যারিসে প্রতিটি পাবলিক বাস ষ্টেশনের ডিজিটাল বোর্ডে বাস আসার সময় প্রদর্শিত হয়। পাশাপাশি কাগজে ছাপানো একটি সময়সূচীর চার্টও লাগানো থাকে।আমার হঠাৎ মনে হলো বাসের সময়সূচীর চার্টটি দেখা দরকার, কখন আমাদের বাস আসবে।এই ষ্টেশনে ডিজিটাল বোর্ড নেই, তবে সময়সূচীর একটি চার্ট লাগানো রয়েছে।আমি চার্টটি ভালোভাবে অনুসন্ধান করে যা দেখলাম তা হলো রোববারের সর্বশেষ বাসটি বিকেল পাঁচটার সময় ক শহরের উদ্দেশ্যে ছুটে যায়।মুহূর্তেই একটু ধাঁধায় পড়ে গেলাম।আমরা প্যারিসের জীবন যাপনে অভ্যস্ত। প্যারিসে সারাদিন মেট্রো ট্রেনের পাশাপাশি পাবলিক বাস শহর ও পাশ্ববর্তী শহরের মধ্যে ছুটে চলে। দিনের নির্ধারিত বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে শুরু হয় নিশি বাস সার্ভিস। এই বাসগুলো দিনের মত পাঁচ দশ মিনিটের বিরতিতে স্টপেজে এসে দাঁড়ায় না। ত্রিশ পঁয়তাল্লিশ মিনিটের বিরতিতে সারা রাত শহর ও পাশ্ববর্তী শহরের মধ্যে যে কোন ষ্টেশনে যাত্রীদের জন্য এসে দাঁড়ায়।এ কারণে প্যারিসের আশেপাশের কোন শহরে যাওয়ার জন্য দিনে বা রাতে কোন সমস্যায় পড়তে হয়না।আমার ধারণা ফ্রান্সের অন্য শহরগুলোতেও হয়তো এমন ব্যবস্থা চালু রয়েছে।আমি মিশেল ও সুমিকে বাস স্টপেজের ছাঊনীতে বসিয়ে রেখে আশেপাশের স্থানীয় কোন পথচারী খুঁজতে গেলাম বাসের খবরাখবর জানতে।কিছুদূর যাওয়ার পর রাস্তার পাশে কার পার্ক করে ভেতরে বসে থাকা এক যুবকের দেখা মিলল। আমি কারের জানালার কাছে গিয়ে যুবকটিকে আমাদের পরিস্থিতি খুলে বললাম, যুবকটি সব শুনে জানালো রোববারে ক শহরে যাওয়ার সর্বশেষ বাস পাঁচটার সময় এখান থেকে ছেড়ে যায়।আমি জিজ্ঞেস করলাম কোন নিশি বাস সার্ভিস চালু আছে কিনা, সে হতাশ করে জানালো এমন বাস সার্ভিস এখানে চালু নেই। আশেপাশে কোন ট্যাক্সি ষ্টেশন আছে কিনা জানতে চাইলে সে কিছু বলতে পারলো না।চরম এক অনিশ্চয়তা চেপে বসলো ভেতরে। আশ্চর্য হলাম এমন একটি পর্যটন এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার এমন নিয়ম কানুন দেখে।ফিরে এসে সুমি ও মিশেলকে জানালাম পরিস্থিতির কথা।বাসস্টপেজ ছেড়ে আমরা আবার সৈকত এলাকার দিকে এগুতে লাগলাম।ওদিকে মানুষের কোলাহল রয়েছে, কাউকে জিজ্ঞেস করে কোন সমাধান পাওয়া যেতে পারে।একটু হাঁটার পরেই একজন স্থানীয় বয়স্ক মানুষের দেখা পেলাম। লোকটিকে সব খুলে বলে পরামর্শ চাইলাম, বললাম এখন আমরা কিভাবে ক শহরে যেতে পারি। লোকটি অবশ্য একটি সমাধানের পথ দেখাল। একটি কফিবারের নাম বলে সেখানে যাওয়ার রাস্তার বর্ণনা দিয়ে বললেন, কাফেবারটি অনেক রাত অবধি খোলা থাকে এবং বারটিতে কর্মরত ব্যক্তিরা একটি ট্যাক্সির সন্ধান করে দিতে পারবে। 

আমার মধ্যে বেশ দুশ্চিন্তা জেগে বসেছে, কারণ আমাদের হতাশা দেখে সঙ্গের পাঁচ বছরের ছোট্ট মানুষটির চেহারায় চিন্তার ছাপ দেখে।লোকটির পরামর্শ অনুযায়ী রাস্তা অনুসরণ করে কফিবারটি খুঁজে বের করলাম।সন্ধ্যার আবছা অন্ধকার নেমে এসেছে। নিস্তব্ধ এলাকার মাঝে আড্ডায় মুখরিত বারের তেরাসের প্রতিটি টেবিল।অনেকেই বারের ভেতরে বিয়ার আর কফির চুমুকে ফুরফুরে মেজাজে টেলিভিশনে ফুটবল খেলা দেখছে।মনে হল এ যেন আমাদের দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের কোন চায়ের দোকানের আড্ডা।এমন দৃশ্য দেখে মনটা এমনিতেই উজ্জীবিত হয়ে উঠলো। ব্যস্ত কফিবারটিতে ঢুকে কর্মরত একজনকে অনুরোধ করে বললাম,আমরা ক’তে যাওয়ার শেষ বাসটি মিস করেছি, আমাদের হোটেল ওখানে, কিভাবে একটি ট্যাক্সি পেতে পারি যদি সহায়তা করেন তবে খুব উপকৃত হই, আমার সঙ্গে আমার ছোট্ট মেয়ে ও স্ত্রী, ওদেরকে নিয়ে উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছি।লোকটি বিরক্ত না হয়ে নিজের কাজ রেখে সঙ্গে সঙ্গে কোথায় যেন ফোন করলো।ফোন শেষ করে বললো,চিন্তা করবেন না ত্রিশ মিনিটের মধ্যে ট্যাক্সি চলে আসবে, আপনারা একটি টেবিলে বসে অপেক্ষা করুণ। পঁয়তাল্লিশ মিনিট পার হলেও কোন ট্যাক্সির দেখা মিলল না। লোকটিকে জানালাম ট্যাক্সি এখনো আসেনি, সে আবার ফোন করে আশ্বস্ত করে বলল কিছুক্ষণের মধ্যে ট্যাক্সি চলে আসবে।আবার অপেক্ষার প্রহর গুনতে লাগলাম। আরও ত্রিশ মিনিট পার হয়ে গেলো, রাতের অন্ধকার নেমে এসেছে, ঘড়ির কাঁটায় রাত সারে দশটা। আমরা দুজন হতাশ হয়ে আলোচনা করছি ট্যাক্সি না পেলে কি করা যায় সেই সমাধানের। আমাদের আলোচনা শুনে মিশেল বলল চল আমরা হেঁটে হোটেলে চলে যাই। ওর সরল সমাধান শুনে হতাশার মধ্যে ভালো লাগলো এই ভেবে যে, ও বিরক্ত না হয়ে আমাদের কষ্টের অংশীদার হয়ে নিজের মত একটি সমাধানের পথ খুঁজে বের করেছে। ওকে বুঝিয়ে বললাম, এখান থেকে আমাদের হোটেল অনেক দূর, হেঁটে গেলে রাত পার হয়ে যাবে।এছাড়া এতো দূর তুমি হেঁটে যেতে পারবে না। 



 






কোন প্রাইভেট কার কফিবারের সামনে আসলেই মনে হচ্ছিল আমাদের ট্যাক্সি এসেছে, আর আমি বার বার কারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম।ল্যাম্পপোস্টের নিয়ন আলোয় জনশূন্য রাতের থমথমে ভাব ফুটে উঠেছে চারপাশে। রাত বাড়ার সঙ্গে কফিবারের আড্ডা ভেঙ্গে অনেকেই নীড়ে ফিরছে আর আমাদের নীড়ে ফেরার অনিশ্চয়তা বাড়ছে।এর মধ্যে বেশ কয়েকবার বারের ওই কর্মীর সাথে ট্যাক্সির ব্যাপারে  কথা বলেছি,সে প্রতিবারই আশ্বস্ত করেছেন কিন্তু আধা ঘণ্টার জায়গায় দেড় ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ায় ধৈর্য ধরে রাখা কষ্ট হচ্ছিল।সেই সঙ্গে অনিশ্চয়তার দোলাচলে ভুগছিলাম দারুণ ভাবে। ট্যাক্সি না পেলে অজানা অচেনা এই ভুতুড়ে এলাকায় কিভাবে একটি হোটেল খুঁজে পাবো সেই চিন্তায় শরীর হিম হয়ে আসছিল,তাছাড়া সে সময় ফরাসি ভাষায়ও তেমন পারদর্শী নই, কাউকে ভালোভাবে কোন কিছু বোঝাতে সমস্যায় পড়তে হতো। 

রাত এগারটার দিকে একটি প্রাইভেট কার এসে দাঁড়াল কফিবারটির সামনে। এক যুবক কার থেকে বেরিয়ে ঢুকল বারের মধ্যে।ভাবলাম হয়তো কফি কিংবা বিয়ার পান করতে এসেছে। আমরা তেরাসের একটি টেবিলে বসে আছি।কিছুক্ষণের মধ্যে বার থেকে একজন লোক এসে বলল, আপনাদের ট্যাক্সি চলে এসেছে। মনে হল, দীর্ঘদিন সমুদ্রে ভেসে বেড়ানোর পর একটি জাহাজের সন্ধান মিলল। মাথা থেকে মুহূর্তেই হতাশার পাহাড় নেমে গেলো। আমি বারের ঢুকে ট্যাক্সির সন্ধান করে দেয়া ব্যক্তিকে আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানালাম।    

রাত সারে এগারোটার দিকে আমরা উইছত্রেম (Ouistreham) ছেড়ে ক শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।ট্যাক্সি করে যখন আসছিলাম তখন ফরাসি গ্রামের রাতের নির্জন চারিধার দারুণভাবে মুগ্ধ করছিল।সাড়ে তিনঘণ্টার যে অস্থিরতায় হাঁপিয়ে উঠেছিলাম তা ধীরে ধীরে প্রশান্তিতে রূপ নিচ্ছিল।প্রায় চল্লিশ মিনিটের যাত্রা শেষ করে আমাদের ট্যাক্সি এসে পৌঁছুল ক ট্রেন ষ্টেশনে।চালক আমাদেরকে হোটেলে নামিয়ে দিতে চাইল কিন্তু আমরা ষ্টেশনের কাছেই নামতে চাইলাম।ষ্টেশন থেকে আমাদের হোটেল দশ মিনিটের হাঁটা পথ।মনে হল,নতুন শহরের মধ্যরাতের নির্জনতা উপভোগের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হবো কেন। ট্যাক্সির ডিজিটাল মিটার স্কিনে পঁচাত্তর ইউরো প্রদর্শিত হয়ে আছে।চালকে তার ভাড়ার সঙ্গে বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বিদায় জানালাম।সমুদ্র পারের সারা দিনের উচ্ছ্বাস আনন্দের রেস কয়েক ঘণ্টায় অস্থিরতায় যতখানি ম্লান হয়েছিল তা আবার ভালো লাগায় পূর্ণতা পেল।গ্রীষ্মের মৃদুমন্দ বাতাস ঘুমন্ত ছোট্ট শহর জুড়ে ছুটে বেড়াচ্ছে।নির্জন রাস্তা ধরে আমরা তিনজন গল্প করতে করতে হোটেলের দিকে এগুচ্ছি,টহল পুলিশের গাড়ি ছাড়া রাস্তায় কোন যান চলাচল নেই।এমন নিস্তব্ধ রাতের শহরে সাধারণত বিশেষ কারণ ছাড়া হাঁটা হয়না।যখন প্যারিসে একা থাকতাম তখন বন্ধুদের সঙ্গে মধ্যরাতের পর মাঝে মাঝেই প্যারিসের রাস্তায় হাঁটতে বের হতাম কিন্তু সুমি ও মিশেলকে নিয়ে কখনো এভাবে মধ্যরাতের পর শহরের রাস্তায় হাঁটা হয়নি কখনো।ওদেরও খুব ভালো লাগছিল।নিরাপত্তার জনিত কারণে হোটেলের প্রধান দরজা ভেতর থেকে তালাবদ্ধ।কলিংবেল চাপতেই রাতের দায়িত্বরত অভ্যর্থনাকর্মী দরজা খুলে দিলেন।শেষ হলো আনন্দ ও অস্থিরতার এক স্মৃতিময় দিন। 

ছা-নাজায়ার শহরের ৩১ বুলভার দো লা লিবেরাছিওন (31Boulevard de la Libération) এ দাঁড়িয়ে বার বার মনে 

ভেসে উঠছিল উইছত্রেম এর (Ouistreham) ঐ দিনের দুঃসহ স্মৃতি ।ভাবছিলাম, এমন ঘটনার আবার পুনরাবৃত্তি হবে নাতো ।


প্যারিসের বাইরে আমার যতটুকু দেখার সুযোগ হয়েছে তাতে মনে হয়েছে ফ্রান্সের ছোট্ট শহরের জীবনধারা প্যারিস থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের।তাই প্যারিস থেকে অন্য শহরে ঘুরতে গেলে সেই শহরের নিয়মকানুন, যাতায়াত ব্যবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে পূর্ব ধারণা নেয়া অতীব জরুরী, তা নাহলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী। এই মুহূর্তে আমরা যদি আমাদের রিজার্ভকৃত ব্লাব্লা কারটি মিস করি তাহলে দিন শেষের এমন মুহূর্তে এখান থেকে নন্ত শহরে যাওয়া বেশ ঝামেলার।এমন সময়, এখান থেকে ট্রেন সার্ভিস নেই,বাস সার্ভিস নেই, এক মাত্র ভরসা ব্লাব্লা কার তাও নির্ভর করবে ভাগ্যের উপর,অন্যথায় ট্যাক্সি খুঁজে বের করতে হবে যা সহজলভ্য নয় এবং ব্যয় বহুল।প্রায় বিশ মিনিট অপেক্ষার পর একটি মোটর কার এসে আমাদের সামনে দাঁড়ালো।কার থেকে একজন যুবক বেরিয়ে এসে বলল, আপনারা কি ব্লাব্লা কারের জন্য অপেক্ষা করছেন? আমি বললাম, আপনি কি মসীয়ও ফাহাদ ,লোকটি বলল, হ্যাঁ।কার রিজার্ভের সময় চালকের নাম ছিল ফাহাদ, তাই প্রশ্ন করে নিশ্চিত হলাম।এর পর সবাই কারে উঠে বসলাম। মসীয় ফাহাদ আমাদেরকে নিয়ে রওয়ানা হলেন নন্তের দিকে। কিছুক্ষণ আলাপের পর বেশ সখ্যতা হয়ে উঠলো তার সঙ্গে।প্রথমেই তার কাছে জানতে চাইলাম ছা-নাজায়ার একটি সুন্দর পরিপাটি সুন্দর শহর কিন্তু এই শহর জুড়ে এমন জনশূন্য ভাব কেন? সে জানালো প্রতিবছর জুলাই আগস্ট পর্যটন মৌসুমে এই শহরের মানুষ অবকাশ যাপনের জন্য চলে যায় অন্য দেশে,কেউ ফ্রান্সের অন্য শহরে, ফলে এখানে স্থানীয়দের পদচারণা কমে আসে।তাছাড়া ফ্রান্সের অন্যান্য সমুদ্রবর্তী এলাকাগুলোতে পর্যটকদের যে রকম ভিড় জমে এই শহরে তেমনটি জমে না। তাই জুলাই আগস্ট মাসে এই শহর অনেকটাই জনশূন্য হয়ে যায়।মসীয় ফাহাদ মরক্কো বংশোদ্ভূত ফরাসি নাগরিক। চাকুরী করেন ফ্রান্সের অন্যতম বৃহৎ ট্রেন পরিবহণ পরিবহণ সংস্থা এসএনছিএফ এ। নন্ত থেকে কার চালিয়ে ছা-নাজায়ার শহরে আসেন চাকুরী করতে।কর্মস্থলে যাওয়া আসার সময় ব্লাব্লাকার ওয়েব সাইটে বিজ্ঞাপন দিয়ে গাড়িতে যাত্রী তুলে নেন।এতে তার গাড়ির জ্বালানি খরচের অর্থ  সাশ্রয় হয়। ভদ্রলোক এক সময় প্যারিসে থাকতেন তাই প্যারিসের জীবনযাপন ও পথঘাট তার ভালো করে চেনা। তবে তিনি জানালেন নন্ত শহরেই পরিবার নিয়ে বেশ সুখে আছেন। সে এই শহরের জীবন যাপন সম্পর্কে আমাদেরকে অনেক কিছু বর্ণনা করলেন। বললেন, যখন তিনি প্যারিসে থাকতেন তখন মাস শেষে এক পকেটে ইউরো আসতো অন্য পকেটে দিয়ে সব বেরিয়ে যেতো, মাস শেষে পকেট শূন্য থাকত। নন্ত শহরে বসবাসের পর থেকে পকেটের টাকা পকেটেই থাকে। তিনি আমাদের বোঝালেন, প্যারিসের তুলনায় নন্ত শহরের জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক কম। আয় করে মাস শেষে অর্থ সাশ্রয় করা যায়।গাড়িতে আসতে আসতে  তিনি আমাদেরকে প্যারিস ছেড়ে নন্ত শহরে স্থায়ী হওয়ার পরামর্শ দিলেন।বাংলাদেশ সম্পর্কে তার কৌতূহলভরা অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আমরা চলে এলাম নন্ত শহরে। ব্লাব্লাকারের চুক্তি অনুযায়ী আমাদেরকে নামিয়ে দেয়ায় কথা মিডিয়াটেক ট্রাম ষ্টেশনে কিন্তু ভদ্রলোকের বাসা আমাদের বাসার কাছাকাছি তাই ওদিকে আর না গিয়ে আমাদেরকে নামিয়ে দিলেন প্রায় আমাদের বাসার প্রায় দ্বারপ্রান্তে। 


বাসায় পৌঁছে সবাই ফ্রেস হয়ে নিলাম।ফ্রিজে রাখা গতদিনের রান্না করা খাবারে হল নৈশভোজ। মধ্যরাত, সবার শরীরে সারাদিনের ক্লান্তি, বিছানা আমন্ত্রণ জানাচ্ছে প্রশান্তির আশ্বাসে কিন্তু আমাদের পরের দিনের ভ্রমণ সূচিতে রয়েছে পর্ণিক সমুদ্র সৈকত।এবার আমাদের ট্রেনে চেপে পর্ণিক যাওয়ার ইচ্ছা। তাই ঘুমোতে যাওয়ার আগে টিকেট রিজার্ভের জন্য এসএনসিএফ এর ওয়েব সাইটে ঢুকলাম। সকালে দুটো ট্রেন রয়েছে।একটা সকাল সাতটা অন্যটা এগারোটা।সুমিকে জিজ্ঞেস করলাম কোন সময়ের টিকেট রিজার্ভ করবো। ও এগারোটার টিকেট রিজার্ভ করতে বলল।ওর কথা মত এগারোটার ট্রেনের তিনটা টিকেট রিজার্ভের জন্য ওয়েব সাইটের চাওয়া অনুযায়ী ব্যাংক কার্ড সহ অন্যান্য যাবতীয় তথ্য পূরণ করে ভ্যালিড অপসনে ক্লিল করলাম। টিকেট রিজার্ভ হয়ে ইমেলে টিকেট চলে আসলো মুহূর্তের মধ্যেই, কিন্তু যখন টিকেট চেক করলাম দেখি আমাদের তিনতে টিকেট রিজার্ভ হয়েছে সকাল সাততার ট্রেনের। সুমিকে এখবর জানাতেই সে রেগে আগুন। সে সোজা জানিয়ে দিলো সে পর্ণিক যাবে না, সারা দিন বাসায় রেস্ট নেবে। আসলে এসএনছিএফ এর ওয়েব সাইট ভুল করেনি, আমি হয়তো মনের অজান্তে সকাল সাতটার ট্রেনকে এগারোটার ট্রেন মনে করে রিজার্ভ করে ফেলেছি। ওকে অনুরোধ করলাম যাওয়ার জন্য কিন্তু ওর এক কথা, রাত একটায় ঘুমোতে গিয়ে সকাল সাতটার ট্রেন ধরা সম্ভব নয়। ওর কথার যুক্তি রয়েছে।ওদের বললাম তাহলে আমি সকালে পর্ণিক চলে যাই আর তোমরা ধীরে সুস্থে ঘুম থেকে উঠে নন্ত শহরটা আরও ভালো ভাবে ঘুরে দেখ।এই শর্ত মেনে নিয়ে আমরা চলে গেলাম যার যার রুমে । আমার মোবাইলে সকাল সাড়ে পাঁচটার এলার্ম দিয়ে কয়েক ঘণ্টার জন্য চোখের পাতা বন্ধ করলাম পরের দিনের পর্ণিক ভ্রমণের আশায়  চলমান ...

পেই দো লা লোয়ার'য়ে চারদিন। পর্ব - ২ (নন্ত ) 

পেই দো লা লোয়ার'য়ে চারদিন। পর্ব - ১

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন