শনিবার, ২১ মার্চ, ২০২০

সচেতনতা ও সাবধানতা অবলম্বনই করোনা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে আমাদের রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায়।

বাংলাদেশ যদি করোনা ভাইরাসের আক্রমণ মহামারীর দিকে ধাবিত হয় তাহলে প্রকৃত সত্য এই যে, চলমান করোনা ভাইরাসের তাণ্ডব মোকাবেলায় বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যেভাবে পদক্ষেপ নিয়ে বাস্তবে কাজ করে চলছে, আমাদের জনসংখ্যা,সমাজ ব্যবস্থা,রাজনৈতিক পরিস্থিতি,জীবন যাপন প্রণালী ও রাষ্ট্রের কাঠামো বিচার বিশ্লেষণ করলে সরকারের এক শতাংশ সক্ষমতা নেই এই বিপর্যয় মোকাবেলার।সেই সাথে সরকারের সদিচ্ছার আন্তরিক কোন আচরণ এখন পর্যন্ত চোখে পড়ছে না।পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো যখন এই পরিস্থিতিকে যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করছে তখন আমাদের সরকার দেশে বঙ্গবন্ধুর শত বর্ষ পালন করল কোটি কোটি টাকা খরচে গান বাজনা, হাজার হাজার মানুষের জমায়েত করে আতসবাজি ফুটিয়ে। যা ছিল অশোভন এবং বর্তমান পরিস্থিতির পরিপন্থী।বঙ্গবন্ধু সারা জীবন গণমানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন।তার জন্ম শত বার্ষিকী উদযাপনের ঘোষিত বাজেটের অর্থ  যদি স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত কর্মীদের জন্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয় এবং যে সব ডাক্তার ও নার্স করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে তাদেকে উৎসাহিত করার জন্য অতিরিক্ত অর্থ প্রণোদনার জন্য ঘোষণা করত তাহলে মহিমান্বিত হয়ে উঠত এই মহান মানুষের জন্ম শত বার্ষিকীর দিনটি।মনে রাখতে হবে, মানুষ বেঁচে থাকলেই তার স্তুতি গাইবে। মানুষের জীবন হুমকির সামনে রেখে এই উল্লাসের মধ্যদিয়ে সরকারে থাকা দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের চরিত্র নতুন করে উন্মেষ ঘটেছে।ফাঁকা নির্বাচনে অভ্যস্ত হওয়ায় এই মুহূর্তকে পূঁজি করে আজ চলছে ঢাকা ১০ আসনের উপনির্বাচন এবং অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চালাচ্ছে চট্টগ্রামের সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন।সুতরাং সরকারের উপর নির্ভর না করে  করোনাভাইরাসের  বিরুদ্ধে সামাজিক ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলাই হবে আমাদের মোক্ষম অস্ত্র। মুখে বড় বড় কথা বলে হাতে তালি পাওয়ার সময় এখন নয়।সমস্যার সমাধান করতে দরকার বাস্তব উপাদান ও উপকরণ।এই মুহূর্তে আমরা যে ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছি তার সমাধান রয়েছে এক মাত্র সচেতনতা ও সাবধানতার মধ্যে।এই দেশে রাজনৈতিক পরিচয়ে খুনের আসামী হয়ে খালাস পেতে পারেন কিন্তু এই ভয়ংকর ভাইরাসে সংক্রমিত হলে কার  সুপারিশে জীবন বাঁচাবেন?ধর্ম,বর্ণ,শ্রেণী,পেশা,দল,মতাদর্শী সব শ্রেণীর মানুষই আজ এই মহামারীর সম্মুখীন।এমন এক বিপদের সম্মুখ সম্ভাবনার সম্মুখীন আমরা হয়েছি যখন অন্য রাষ্ট্রের সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম কারণ এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য প্রতিটি দেশ নিজেদের জন্য ব্যস্ত রয়েছে।এই মুহূর্তে সকল দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে আবার সেই বাহান্ন ও একাত্তরের মত সামগ্রিক ভাবে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে এক সারিতে দাঁড়িয়ে লড়াই করা ছাড়া আমাদের অন্য কোন পথ খোলা নেই।প্রত্যেকেই যার যার অবস্থান থেকে এখন সম্মিলিত ভাবে কাজ করতে হবে।এর মধ্যে অনেক ডাক্তার,এনজিও,সামাজিক সংগঠন,সমাজ সচেতন ব্যক্তি নানা সচেতনতামূলক দিকনির্দেশনা দিয়ে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা চালাচ্ছেন যা প্রশংসার দাবী রাখে।আমাদের উচিত দু থেকে তিন মাস এই সতর্কতার মধ্যে জীবন যাপন করা এবং বিশ্ব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের মধ্যে থাকা।তবে ফেচবুকে এই সংকটকে কেন্দ্র করে  এক শ্রেণীর অসাধু চক্র মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমাদের দায়িত্ব এ ব্যাপারে সতর্ক হয়ে সঠিক দিক নির্দেশনা অনুসরণ ও পালন করা।আমরা জানি, রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা রয়েছেন তাদের সক্ষমতা নেই জনগণকে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার , মানুষকে ঘরে বসিয়ে এই দুর্যোগকালীন সময়ে আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করা। তবে রাষ্ট্র সর্বোচ্চ শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান আপনাদের হাতের সেই শক্তিটুকু অন্তত ব্যবহার করুণ তাদের বিরুদ্ধে যারা সংকটকে কেন্দ্র করে মানুষকে হয়রানী ও হতাশায় নিমজ্জিত করে।যারা ব্যবসা পেশায় জড়িত আছেন তাদের অনেক বড় ভূমিকা রাখার সময় এখন।মানুষের বিপদকে পূঁজি না করে সঠিক মূল্যে পণ্য সামগ্রী সরবরাহ করে মানুষের পাশে দাঁড়ান।কারণ এই মুহূর্তে অর্থ মোহে থেকে কি হবে, যদি আপনি এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মারা যান তাহলে আপনার অর্থ ব্যাংকে পরে থাকবে শুধু আপনি থাকবেনা এই পৃথিবীতে।ঊনপঞ্চাশ বছর পূর্বে স্বাধীনতা যুদ্ধে সময় আমরা রাজাকার, আল বদরদের দেখেছি। তাদের বংশধরেরা এখনো রয়েছে আমাদের সমাজের মধ্যে,কিন্তু কারা তারা? তাদেরকে চেনার সময় এসেছে নতুন করে।

যারা প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে মুনাফা লুটবে।

যারা মানুষের বিপদকে পূঁজি করে চিকিৎসা বাণিজ্য করবে।

করোনা ভাইরাস মোকাবেলাকে লক্ষ্য করে সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত অর্থ যারা চুরি করবে।

এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলাও আমাদের মহান দায়িত্ব।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন