শনিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২০

স্মৃতির আঙ্গিনায় ঘুরে আসা একদিন

শিল্প সংস্কৃতির প্রতি যতটুকু অনুরাগ বা ভালোবাসা নিজের মধ্যে রয়েছে তার শুরুটা হয়েছিলো আপাদমস্তক সংগীত প্রেমী ইকবাল ভাইয়ের সান্নিধ্যে। বয়সের ব্যবধান তার সঙ্গে আমার বেশ, কিন্তু বন্ধুত্ব ও আলাপ আলোচনায় সব সময় সমবয়সী বন্ধুর মত।উদিত যৌবনের তারুণ্য চঞ্চল স্বপ্ন দেখা সময়ের অনেক সোনালী স্মৃতি তার সঙ্গে।যে বয়সে মানুষ ভালবাসতে শেখে, ভালোলাগায় আসক্ত হয় সেই বয়সের অনেক কিছুর প্রতি ভালোবাসা ও ভালোলাগায় আসক্ত হওয়া তাকে দেখে।শিল্পী সত্তার পাশাপাশি তার রয়েছে কবি সত্তা যা তার প্রচার বিমুখ স্বভাব ও পর্যাপ্ত প্রকাশনার অভাবে অনেকেরই অজানা।তার কবিতার ভাব দর্শনে ফুটে ওঠে ঈশ্বর,প্রেম প্রকৃত,সমাজ এবং শ্রেণি সংগ্রাম।তার লেখা গণসংগীতগুলো স্থানীয় সংগীত অঙ্গনে বেশ জনপ্রিয়।এছাড়া তিনি দক্ষ একজন সংগঠক।উদীচী রাজবাড়ী জেলা সংসদের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সংগঠনটির সাথে তার শ্রম ঘাম লেগে আছে।দায়িত্ব পালন করেছেন সাধারণ সম্পাদকের ।এছাড়া বর্তমানে জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন ।এক সময় উদীচীর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড,বানভাসি মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ ও উদীচী সভাপতি ডাঃ সুনীল কুমার বিশ্বাসের নেতৃত্বে ফ্রি ফ্রাই ডে ক্লিনিক কার্যক্রম পরিচালনা ,বৈকালিক ভ্রমণে শিল্প সাহিত্য দর্শন নিয়ে গল্প করে সময় পার করা, মাঝে মাঝে প্রকৃতি দর্শন ইত্যাদির মধ্য দিয়ে আমার রাজবাড়ীর অবস্থান কালীন সময়ের বড় একটা অংশ কেটেছে তার সঙ্গে। এবার দেশে ফিরে আট বছর পর তার সঙ্গে দেখা।চিন্তা চেতনায় সেই আগের মতই রয়েছেন,শুধু চেহারায় একটু বয়সের পরিবর্তন আমার মত।যখন রাজবাড়ী উদীচী জেলা সংসদে আমার নিয়মিত যাওয়া আসা ছিল তখন সন্ধ্যের গানের আসরে ইকবাল ভাই, জব্বার ভাই, মদন দা,গৌতম দা, আলীম ভাই এর গাওয়া প্রিয় গানগুলোর সুরে মুগ্ধ হতাম। মনে হতো এই গানগুলো অনেক প্রথিতযশা শিল্পীর কণ্ঠে গাওয়া হলেও এদের কণ্ঠে বেশী শ্রুতিমধুর।

 জেলা উদীচীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক জব্বার ভাই, একজন অতিশয় বিনয়ী সংগীত সাধক সমাজতন্ত্রী মানুষ।এছাড়া তার আচরণ ও কথার মিষ্টতা দ্বারা যে কাউকে আপন করে নেবার এক সম্মোহনী গুনের অধিকারী ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষও তিনি। সংগীতের উপর অগাধ দখল। জেলার সংগীত পীপাসু মানুষদের প্রেম, প্রকৃতি, সমাজ সংস্কারের গান শুনিয়ে বিমোহিত করেন।
আলীম ভাই গান ভালোবাসেন,গান করেন ।পাখীর জীবনের মত উড়ে বেড়ানো তার জীবনের বৈশিষ্ট্য ।

মদন দা পেশায় স্বর্ণকার কিন্তু গানের প্রতি তার অসম্ভব দরদ।সংগীত এদের মত মানুষের জন্যই হয়তো সৃষ্টি হয়েছে।সাদাসিদে জীবন যাপনে অভ্যস্ত মানুষটির মধ্যে একটি নিজস্ব জীবন দর্শন রয়েছে যা তার সাথে গভীর ভাবে না মিশলে বোঝা সম্ভব নয়।
এবার রাজবাড়ীতে অবস্থানকালীন সময়ে ইকবাল ভাইকে অনুরোধ করেছিলাম সেই আগের দিনের মতো একসঙ্গে বসে সবার গানের একটি আড্ডার আয়োজনের। ইকবাল ভাই সবাইকে ১৪ মার্চ ২০১৯ সন্ধ্যায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন উদীচী কার্যালয়ে। সেই হারিয়ে যাওয়া দিনের মতো গানের আড্ডায় সবাই উপস্থিত হয়ে গান শুনিয়েছেন প্রাণ উজাড় করে, আর সুরের ভেলায় ভেসে আমি ফিরে গিয়েছি সেই তারুণ্য চঞ্চল ছুটে চলা দিনগুলিতে।
ধন্যবাদ লিটন কুণ্ডু দা,গৌতম দা, বিল্লাল এবং উদীচী রাজবাড়ী জেলা সংসদের সবাইকে সুন্দর একটি স্মৃতিময় সময় উপহার দেবার জন্য ……।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন