বুধবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২০

ক্যামেলিয়া ফোটার প্রতীক্ষা

রবীন্দ্রনাথের ক্যামেলিয়া কবিতার শেষের দিকে কবিতার নায়কের প্রতীক্ষার প্রহর কাটে উপহার পাওয়া ক্যামেলিয়া গাছের ফুল ফোটার অপেক্ষায়।প্রতিদিন বনজঙ্গল ঘুরে সন্ধ্যায় টবে জল দিয়ে অধীর আগ্রহে দেখে ফুলের কুঁড়ি এগোল কত দূর।কারণ ফুল ফুটলেই শালপাতার পাত্রে সাঁওতাল মেয়ের হাতে করে টব শুদ্ধ গাছটিকে পাঠাবে তার মনের মানুষের কাছে। সে জন্যই তাঁবু পেতে পড়ে আছে বনের মধ্যে। ক্যামেলিয়া ফোটা টবটাকে পৌঁছে দিতে পারলেই ফিরে যাবে কলকাতায়।
কবিতাটি পড়ে আমার মনে হয়েছিলো ক্যামেলিয়া ফোটার জন্য কেন এতো দিনের প্রতীক্ষা।ফুলের কুঁড়ি আসলেইতো কিছুদিনের মধ্যে ফুল ফোটে।তবে কেন ক্যামেলিয়া ফোটার জন্য এতো প্রতীক্ষা?

আমার স্ত্রী একটি প্রতিষ্ঠানে বেশ কয়েক মাস চাকুরী করার পর তার বিদায় বেলায় সহকর্মীরা তাকে উপহার দিয়েছিল একটি ক্যামেলিয়া ফুলের চারা।গাছটির শাখা প্রশাখায় ছিল ছোট ছোট কুঁড়ি।আমি গাছটিকে বড় একটি টবে রোপণ করে খুব যত্নে পানি ঢেলে তরতাজা করে তুলি। ফুলের কুঁড়িগুলো ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে, কিন্তু ফুল ফোটে না। প্রতীক্ষা এই কুঁড়িগুলো থেকে কবে ফুটবে ফুল।প্রায় ছয় মাসের প্রতীক্ষা।আর মনে হতে থাকে রবীন্দ্রনাথের ক্যামেলিয়া কবিতার নায়কের কথা।ফুল ফোটার প্রতীক্ষার যন্ত্রণা।অনেক প্রতীক্ষার পর আজ সকালে দেখি আমার ক্যামেলিয়া গাছের অনেক কুঁড়ির মধ্য থেকে ফুটে আছে একটি ফুল।মনে পড়ে গেলো ক্যামেলিয়া কবিতা শেষের সেই কয়েকটি লাইন। মনে হল, ক্যামেলিয়া শুধু একটি ফুলের নাম নয়, এ যেন এক সুদীর্ঘ প্রতীক্ষার নাম......
আর দিন-কয়েকেই ক্যামেলিয়া ফুটবে,
পাঠিয়ে দিয়ে তবে ছুটি।

সমস্ত দিন বন্দুক ঘাড়ে শিকারে ফিরি বনে
জঙ্গলে,

সন্ধ্যার আগে ফিরে এসে টবে দিই জল
আর দেখি কুঁড়ি এগোল কত দূর।

সময় হয়েছে আজ।

যে আনে আমার রান্নার কাঠ
 ডেকেছি সেই সাঁওতাল মেয়েটিকে।

তার হাত দিয়ে পাঠাব
 শালপাতার পাত্রে।

তাঁবুর মধ্যে বসে তখন পড়ছি ডিটেকটিভ
গল্প।

বাইরে থেকে মিষ্টিসুরে আওয়াজ এল, ‘বাবু,
ডেকেছিস কেনে।
'
বেরিয়ে এসে দেখি ক্যামেলিয়া
 সাঁওতাল মেয়ের কানে,

কালো গালের উপর আলো করেছে।

সে আবার জিগেস করলে, ‘ডেকেছিস কেনে।
'

আমি বললেম, ‘ এইজন্যেই।
'
তার পরে ফিরে এলেম কলকাতায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন